তুমি রাতের স্তব্ধতা ভেঙে ভোরের আযান
গির্জার ঘণ্টাধ্বনি
সন্ধ্যার মন্দিরে প্রাণ-সঞ্জীবনী ধূপের ঘ্রাণ
গণতন্ত্র তুমি চৈত্র সংক্রান্তির পরে বৈশাখের মতো –
উৎসবমুখর, জীর্ণ পুরাতন মুছে
আশায় রঙিন।

গণতন্ত্র তুমি তরুণ মিছিলে প্রত্যয়ী যুবার
দৃপ্ত কথার ক্যানভাস
শাহাবুদ্দিনের ছবির মতো দক্ষতায় আঁকা;
তুমি নির্বাচনী সভায় অশীতিপর চোখে জ্বলজ্বলে আশা
ভোট কেন্দ্রে নাতির কাঁধ-চড়া বৃদ্ধার
বিশ্ববিজয়ী হাসি।

গণতন্ত্র তুমি পিতৃপুরুষের আশীর্বাদ,
বর্তমানের শপথ,
ভবিষ্যতের স্বগত-উৎসারণ
তুমি বয়েসী মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে ক্লান্ত শ্লোগান
জনসমুদ্রে মাথা-উঁচু জননীর
সাহসী উচ্চারণ।

গণতন্ত্র তুমি ফসলের জমি ঘিরে কৃষকের
সমবেত প্রতিরোধ
সন্ত্রাসে পা-হারা যুবকের হার-না-মানা স্বপ্ন;
তুমি দেয়াল কাঁপিয়ে মানবাধিকারের কালো পোস্টার
সংবাদপত্র জুড়ে মানববন্ধনের
উজ্জ্বল ছবি।

গণতন্ত্র তুমি মূকের চিৎকার, মজুরের হাসি
বাউলের ঝাঁকড়া চুল,
স্টেডিয়াম ছাপিয়ে তারুণ্যের গান
তুমি বন্দী শিবির থেকে স্বদেশের স্বপ্ন-আকুল
শামসুর রাহমান।

গণতন্ত্র তুমি মিছিলের ভারে দেবে যাওয়া রাজপথ
সিংহাসন ছেড়ে নতমুখে দাঁড়ানো স্বৈরাচার;
তুমি চায়ের দোকানের টিভি ঘিরে জনতার ভীড়
জাতির উদ্দেশ্যে প্রবীণ রাষ্ট্রনেতার
আশাময়, সতেজ ভাষণ।

গণতন্ত্র তুমি জাতীয় পতাকা সামনে ইউনিফর্ম-পরা
নিখুঁত স্যালুট
মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইতিহাস-বক্তার নিখাদ সত্যকথন;
তুমি বিজয় দিবসের ষোলোতম তোপধ্বনি,
প্যারেড স্কোয়ারে ছত্রীসেনার
সুনির্দিষ্ট অবতরণ।

গণতন্ত্র তুমি ভারী ব্যাগ পিঠে খোকার দৌড়ের মতো –
টলোমলো, অথচ স্নিগ্ধ–নবীন–প্রিয়
তুমি স্কুলে যাওয়া ছেলেটাকে ঘিরে ভিখারী মায়ের
বল্গাহীন আশার ফানুস
বেণী দুলিয়ে স্কুলফেরত কিশোরীদের
তারস্বর কলরব।

গণতন্ত্র তুমি ব্যাকুল বিকেলে তরুণ-তরুণীর থরো থরো
কোমল স্পর্শ
সন্ধ্যায় হাত ধরে সমবেত কণ্ঠে সোনার বাংলার গান
তুমি ভোরের রাস্তায় হাসিখুশি গার্মেন্টস শ্রমিকের ঢল
হরতালে ফাঁকা পথে ব্যাট-বল হাতে
পথশিশুদের কোলাহল।

গণতন্ত্র তুমি আকাশ ছুঁয়ে দেয়া অটল মানচিত্র এক,
লাল-সবুজের পতাকা হাতে কিশোরের
অবিরাম দৌড়,
চারটি অক্ষরের সুতোয় গাঁথা অবাক বর্ণমালা,
একটি প্রগাঢ় শব্দের চাদরে মোড়ানো ক্ষুদ্রতম গল্প

আবু সায়ীদ আর নূর হোসেনের বুকের পিঠের
উদার পৃষ্ঠা জুড়ে লেখা
দীর্ঘতম কবিতা।