আর কতো মৃত্যু হলে একে ব্যর্থতা বলবে তোমরা?
ওই দ্যাখো চুপচাপ শুয়ে জাহিদ—
নিলয় নির্ঝরের কথা ভুলে;
সমুদ্র সৈকত ফেলে পুকুরের পাড়ে চিৎ হয়ে
পড়ে আছে এমদাদ:
লক্ষ্যভেদী ছত্রীসেনার কী লক্ষ্যহীন করুণ মৃত্যু!
এদিকে মমিনের লাশ ছড়ায় অনাগত সাবরীর নরম ঘ্রাণ
সোনিয়ার চোখে শুধু ভয়!
মাশাহেদের পিতা এনশাদ ওদিকে উপুড় হয়ে
নিঃসঙ্গ ছেলেটি—বাবা নেই, যার কোথাও কিচ্ছু নেই!
বহুক্ষণ ম্যানহোলে ছটফট করেছে বুলেটবিদ্ধ ইলাহী
যখন লবির মাথায় হাত বুলিয়ে সাকিব—‘আর কেঁদো না মা’;
এমনকি, মা’র মুখে কচি হাত বুলিয়ে ইকবাল-কন্যা নুসাইবা
পিতার স্পর্শ যার কাছে জরায়ু ছুঁয়ে থাকা কানের স্মৃতিমাত্র।
যখন এ প্রশ্ন বারবার জেগে ওঠে
পুত্রশোকে স্তব্ধ আব্দুল হকের প্রাচীন শ্মশ্রু জুড়ে—
‘কী দোষ ছিল আমার বাবার? ও তো শান্ত ছিল খুব!’
অবশ্যই শান্ত ছিল মাহমুদ, তাই এই বেলা প্রশান্ত চোখে
চেয়ে আছে প্রাণহীন আকাশের দিকে।
অতএব এ একটি সফল নৈশ অভিযানের গল্প,
যার শেষ পাতায় সাতান্নটি স্বপ্ন এবং
সতেরোটি কল্পনার বীভৎস মৃত্যুর সালতামামি,
পাদটিকায় একটি অবান্তর প্রশ্ন:
ঠিক কয়টি লাশ পড়লে একটি পুরস্কারযোগ্য সফলতা
ব্যর্থতার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়?
(প্রথম প্রকাশ: ‘হৃদয়ের রাজপথে,’ পাঠসূত্র প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১২)
পুনশ্চ: ২০০৯-এর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিবর্গ ও তাদের পরিবার সদস্যদের একাংশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে এই কবিতায়। তাদের সবাইকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা।