একটি অর্থহীন কবিতার শুরু হোক এইভাবে ––
‘রক্তনীল ঘাসে ছাওয়া সুউচ্চ সমুদ্রের পুরোনো দেয়াল জুড়ে
শুধু লাশ আর লাশ।‘
নিরর্থক শব্দাবলী, তবু অতীতের পর্দা সরিয়ে চেয়ে দেখি
খাটিয়ায় শুয়ে দেহগুলো আর কেউ নয়––
রফিক, সফিক, বরকত
এবং ডায়েরির পাতা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লেখা
আরও যত পরিচিত নাম।
অর্থহীন কবিতা, তবু যেন সময় আটকে গেছে নিরর্থক ফাঁদে
সেজন্যেই কি না সাতান্ন বৎসর পরে এরা প্রত্যেকে
ইউনিফর্ম গলিয়ে শরীরে
এক ছুটে বনানীর গোরস্থানে এসে
আবার শুয়ে চুপচাপ।
গুণে দেখি, সাতান্নটি অভিমানী মুখ
এবং শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আরও কয়েকজন;
সাকুল্যে চুয়াত্তরটি লাশ, তবু একটাই তো মাস ––
বুঝি তাই দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের পাতায়
দুইটি বৃত্তের ক্ষত।
দুইটি মোটে ক্ষত, তবু রক্ত পড়ে ভিজছে উঠান,
খসে পড়ছে পিলখানার গেট
কেঁপে উঠছে শহীদ মিনার
ভেসে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেনাসদরগামী
রাস্তার যত ধূলো।
নিরর্থক শব্দের এই অবিরাম কবিতা বুঝি থামবে যেয়ে
তিতাসের পাড়ে––ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
শাকিলের বৃদ্ধা মা যেখানে নিশ্চল চোখে চেয়ে;
রক্তস্রোতের মেঘনা তবু মিশবে জেনো সুনিশ্চিত
বঙ্গোপসাগরের অপ্রতিরোধ্য বিশালতায়।
তখন না হয় নতুন নার্গিস অথবা প্রলয়ংকরী আইলার
অর্থবোধক গল্প বলা যাবে।
(প্রথম প্রকাশ: ‘হৃদয়ের রাজপথে,’ পাঠসূত্র প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১২)