তিনটি মোটে শব্দ লিখা হবে, অথচ অক্ষরগুলো হাঁটছে ত্রস্ত পায়ে;
কাগজের পৃষ্ঠাজুড়ে শূন্যতাগুলো কাঁদছে সব হারানোর বেদনায়,
দ্বিধায় কাঁপছে হাত, হাতের ভেতরে হাত, শিউরে উঠছে কলম,
এমনকি দোয়াতের কালি তাকিয়ে আছে ভর্ৎসনা চোখে!

ঠিক তিনটি শব্দে তোমাকে জানিয়ে দেব ভালবাসার শত কথা,
বুঝি তাই ড্রয়ারভরা বিরহী পদ্যগুলো চেয়ে আছে অসহায়;
তিনটি শব্দের মধুরতম পরিণয়ে এদের করুণ অথচ সফল পরিসমাপ্তি হবে,
বসরার বাগান ভরে জন্ম নেবে অসংখ্য লাল গোলাপ, হিম বৃষ্টি ঝরবে, ঢাকার
রাত জুড়ে নামবে অনেক ঘুম, দু:স্বপ্নেরা মারা যাবে মুখ থুবড়ে।

আমাদের দুজনের মধ্যকার শত সহস্র বৎসর লুক্কায়িত শব্দত্রয়
লিখে নেবার সাথে সাথে অনন্ত অপেক্ষার ইতি ঘটবে, অনেক রাতের কান্নারা
উড়াল দেবে নীল প্রজাপতি হয়ে, ওদের খবর পায়ে উড়ে যাবে লক্ষ শ্বেত কপোত,
তখন মেঘে মেঘে সংষর্ঘ হবে, আমাদের ছুঁই ছুঁই হাত শেষমেষ স্পর্শ করবে একে অন্যকে,
স্পর্শ করবে আমাদের চুল-নাক-চোখ, এমনকি ঠোঁট, এমনকি হয়তো শরীর।

তিনটি শব্দের সুদক্ষ উচ্চারণ, সঙ্গে সঙ্গে তুমি আমার হবে, নিসর্গ হবে ভূস্বর্গ,
অথচ শব্দগুলো হিমালয়-আল্পসের যুগপৎ ভার আর ভিসুভিয়াসের অগ্নি জড়িয়ে
বসে আছে আমাদের অন্তর্গত দ্বিধা জুড়ে; যেন ওদের জন্মমাত্র মৃত্যু ঘটবে কোনো
দু:খবিলাসী প্রেমিকের, যেন দেখামাত্র নিভে যাবে পুকুর জুড়ে প্রতীক্ষার ঢেউ,
স্তব্ধ হবে আশা-নিরাশার উন্মাতাল নাচ; তখন হয়তো উচাটন বিরহ নিয়ে
মোনালিসার মতো চেয়ে থাকা হবে না আর কখনোই।

মাত্র তিনটি শব্দে লিখে নেয়া চাই সুদীর্ঘ প্রণয়ের চিঠি,
অথচ সুপ্রাচীন বিরহেরা ফুঁসে উঠে প্রাণপণ, উথলে উঠে অভিমানে;
মোটে তিনটি শব্দের মন্ত্রে মোড়ানো বাণপ্রস্থ শর, অথচ কী আশ্চর্য––
অক্ষরগুলো তাকিয়ে আছে ভীত হরিণীর মতো!


(পরিমার্জিত সংস্করণ/ প্রথম প্রকাশ: ‘হৃদয়ের রাজপথে,’ পাঠসূত্র প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১২)