অনেককাল আগের কথা
বলছি বসে শোনো,
এক রাজার তিন কন্যা
পুত্র নাই কোনো।

রাজার মনে ভারী কষ্ট
রত্নই তার নাই,
কন্যা তো ফেলনা জিনিস
রান্না শেষের ছাই।

পুত্র হলো উদ্ধত বীর
উদ্যোমে বলিয়ান,
পুত্র হলো জ্ঞানের প্রদীপ
চির উন্নত প্রাণ।

পুত্র মানে খোদার দয়া
হবু রাজকুমার,
এসব ভেবে দুখী রাজার
হয়না ঘুম আর।

কত শত বৈদ্য এলো
টিপলো রাজার নাড়ী,
রাজকোষ ফাঁকা হলো
অর্থ কাড়ি কাড়ি।

কেউ বলে যাও বেনারসে
কেউবা বলে কাশি,
কেউ বলে বলী চড়াও
আস্ত হাজার খাসি।

কেউবা বলে বাদুড় খেলে
পুত্র হবে ধলা,
পুত্রলোভে দুখী রাজার
তাবিজে ভরে গলা।

মাস যায় বছর যায়
পুত্র আসে না,
রাজা মুখ গোমড়া রাখে
বৃথা হাসে না।

এমন সময় আষাঢ় মাসে
থুরথুরে এক বুড়ো,
লাঠি ভরে এসে বলে
ইচ্ছে হবে পুরো।

রাজার মনে পুলক লাগে
বাজে খুশির বাদ্য,
বুড়োকে বলে, সব দেব
যতটুকু সাধ্য।

বুড়ো বলে হেসে,
আমি কেন নেব তা?
আমি কিছু করব নাতো
করবে স্বর্গের দেবতা।

প্রাণভরে ডাকো তারে
জপ তার নাম
একবার দেখা দিলে
সুসংবাদ আগাম।

পুত্রপাগল দুখি রাজা
আশায় বুক বাঁধে,
দিন রাত মগ্ন ধ্যানে
পুত্র আশায় কাঁদে।

শরৎ কাটে ধ্যানে ধ্যানে
হেমন্তে উপোস,
দেবতার দেখা নাই
মনে বড় আপসোস।

এমন ভাবে চলতে থাকে
আরো বহুদিন,
দেবতারা বর দেবে
এরূপ আশা ক্ষিণ।

পুত্র আশায় দৃঢ় রাজা
অটল তবু ধ্যানে,
চাই তার বীর পুত্র
তেজে আর জ্ঞানে।

সেবার ঠিক ফাগুন মাসে
পুর্ণিমার এক রাত্রে,
দেবতা এসে দেখা দিলো
সেই বুড়োর গাত্রে।

রাজার চোখে সর্ষে ফুল
দেবতার একি রূপ!
দেবতা বলে, সেকি হে,
এখন কেন চুপ?

প্রভু তোমায় দিয়েছিলেন
তিন তিনটে মেয়ে,
যত্ন তাদের নাওনি মোটেই
পুত্রের গান গেয়ে।

তিনি বড় ভালো জানেন
কোনটা মঙ্গলময়,
দেবীস্বরুপ কন্যা দিলেন
তুমি করলে অপচয়।

জ্ঞান বুদ্ধি মাথায় করে
জন্মালো কে ধরায়,
সবই হলো চর্চার ফল
আনন্দ আত্মগড়ায়।

পাঠশালায় পড়াও তাদের
দাও অস্ত্র শিক্ষা,
দুঃসময়ে দেখে নিও
নারীশক্তির দীক্ষা।

রত্ন শুধু পুত্র নয়
কন্যাও হীরে বটে,
সহজ সরল এই কথাটা
আসত যদি ঘটে!

প্রভু তোমায় ভালোবেসে
দিলেন হীরে তিনটা,
নতুন করে চাইছো আবার
অযত্নে আগের ঋণটা!