দাঁড়িয়েছিলাম খোলা আকাশ আর সবুজ প্রান্তরে;
পরিবেশটা মনের জন্য প্রেমিকার শান্ত ঊর্মি।
হঠাৎ করে ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি;
ভিজে গেল মাথা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ শরীর।
বদ্ধ চোখে অনুভব করার প্রয়াসে ছিলাম;
অনুভূতি সিংহের নাকে লুকানোর জন্য তৎপর।
চোখ খুলে একমুঠো বৃষ্টি হাতে তাকালাম;
এখন তবে পেলাম রহস্যের সমাধান,
কেন অনুভূতি লুকাতে চেয়েছিল গোপন কুঠুরিতে।
মুঠো হাতে ছিল এক মুঠো রক্ত!
তবুও খোলা আকাশ এখনো লাল হয়নি!
ভ্যান্টব্ল্যাক এর পর্দা টানা আছে আকাশে।
মনসুদ্ধ আবহাওয়া ঘন অন্ধকারে ঢাকা।
তবু বৃষ্টি হচ্ছে লালচে ঘন রক্তের;
গন্ধ পাচ্ছি বিশুদ্ধ হিমোগ্লোবিনের,
দেখতে পাচ্ছি নিকোটিন বিহীন নির্ভেজাল রক্ত।
উৎস থেকে সমাপ্ত বিন্দু লক্ষ্য করতে যখন নিচে দেখলাম,
সবুজ প্রান্তর পরিণত হয়েছে লাশের আশ্রমে।
স্তুপ নয় ; ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।
সবাই কঙ্কালে রূপান্তরের অপেক্ষায় আছে;
তবে কয়েকে এ ধাপ পূর্ণ করে ফেলেছে।
প্রথমে যে পুষ্প মঞ্জুরী সম্পন্ন গাছ দেখেছিলাম,
তা এখন এক শান্ত কিন্তু বিক্ষিপ্ত হাসি।
এখানে আসার সময় একটি ফুল দেখেছিলাম।
অসহায় ভেবে পা চাপা দিয়ে এসেছিলাম।
এখন সেখানে রক্ত সমেত কঙ্কালের স্তুপ ;
সকল কঙ্কালের বুকেই আছে রক্তের চিত্র ;
বুঝলাম এটা কালো কলমের রক্তের দাগ।
এই দাগ শিংগায় ফু দেয়ার আগে মুছবে না।
আসার সময় একটা চারা গাছকেও দেখেছিলাম;
মনে হয় লৌহের অভাব ছিল।
মনে হচ্ছিল বাঁচবে না ;দুর্বল!
তাই গোড়া থেকে উপরে ফেলেছিলাম;
এখন সেখানে কিছু হাড়ের গুড়ো পড়ে আছে!
বৃষ্টির পূর্বে একটি নিখুঁত গাছকেও দেখেছিলাম।
কুকুর তার ওপর ইউরোক্রাম ঢালছে;
সেখানে এখন ফাসি ঝুলে আছে,
হেচকা টানে ঘাড় মটকে গেছে,
মাংস ঝলসে পড়ছে রেডিয়েশনের তাপসে।
তবুও নয়ন-মনি মাছের ন্যায়;
যেন এক আত্ম-বন্দী জীবন্ত লাশ!
বৃষ্টির আগে একটা আনম্য গাছও দেখেছি।
পুকুর পাড়েই ছিল গাছটা।
পুকুর থেকে এক লাল তিমি গাছটার উপর পড়লো;
তিমির সরে গেলে গাছটা আকাশ ধরার উপক্রম।
এখন সেখানে বন্দুক হাতে শুয়ে আছে কঙ্কাল!
অনেক ঘুরলাম সেই ভরা প্রান্তর,
খুজলামও অনেক। তবুও এমন কাউকে পেলাম না;
যে কঙ্কাল হাড় তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
কারোর-ই দাঁড়ানোর সাধ্য নেই;
কারণ খোলা আকাশেও সূর্য ছিল না।
প্রথম থেকেই অনুজ্জ্বল ছিল।
ভুলে যান সিংহের নাকে অনুভূতির লুকানোর কথা,
ভুলে যান গোপন কুঠুরিতে অনুভূতির লুকানো,
ভুলে যান সব রহস্যের মিথ্যে নাটক।
উপভোগ তো আমি প্রথম থেকেই করছিলাম।
কারণ, এ প্রান্তর ও খোলা আকাশ আমার।
আমিই রক্তের উৎপাদক,
আমিই হাড়ের চাষী,
আর আমিই মৃত্যুর কারিগর।