মানুষে মানুষে ভাবনার ভিন্নতা আছে, ছিল, থাকবে, সাহিত্যে সব বলা যায়, এই প্রকাশকে শিল্পিত করে তোলাই সাহিত্যিকের কাজ, কিন্তু জীবন নিজে কি শিল্পিত ? বহু অনাকাঙ্ক্ষিত অন্ধকার কি জড়িয়ে নেই জীবনের বৃত্তে? যদি তাই হয় জীবনের শিল্পিত রুপায়নের মাধ্যমে সাহিত্য কি তবে পারে সমগ্র জীবনের ভাষা রূপ দিতে? এইসব প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে বিশ্ব সাহিত্যের কিছু বিতর্কিত সৃষ্টি। আমার এই সিরিজ লেখায় তুলে আনার ইচ্ছে রইল বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্যের সেইসব বিতর্কিত ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে যাদের লেখা ছড়িয়েছে বিতর্কের আগুন, তারা কি আসলেই ভাবনা ও জীবনের সমগ্রতাকে সাহিত্যে ধারন করেছেন না সীমা লঙ্ঘন করেছেন, এই বিতর্কের কোন শেষ নেই ।
লোলিটা ও তার স্রষ্টা ভ্লাদিমির নাবোকভঃ
এই লেখার শুরু করছি রাশিয়ান লেখক ভ্লাদিমির নাবোকভকে দিয়ে যাকে বলা হয়ে থাকে গত শতাব্দীর সবচেয়ে বিতর্কিত লেখক । কারণ একটাই গত শতাব্দীতে তার হাতেই জন্ম নিয়েছে সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত উপন্যাস 'লোলিটা'।
আসলে আলোচিত বা সমালোচিত বলা কেন, এটি যে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিতর্কিত উপন্যাস। এই একটা বই তাকে নিয়ে এসেছে পরিচিতির শীর্ষে, সাফল্যের চূড়ায়। দিয়েছে নাম, যশ, অর্থ, খ্যাতি, দুর্নাম সবকিছু! ভ্লাদিমির প্রথমে ইংরেজিতে লেখেন ‘লোলিটা’ । ১৯৫৫ সালে প্যারিসে, তিন বছর পর নিউইয়র্ক থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি নিজেই রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন ‘লোলিটা’।
বইটির আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেতে অবশ্য সময় লাগেনি। আসলে ‘লোলিটা’র পাতায় পাতায় ছিল বিতর্কিত হয়ে উঠার মতো মশলা। উপন্যাসে হামবার্ট নামের এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি তুলে ধরেছেন তার জীবনের গল্প। যেখানে দেখা গেছে ১২ বছর বয়সী এক বালিকার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এক পুরুষের। কিশোরী মেয়েদের প্রতি আজন্ম টান অনুভব করে এসেছে এই বইয়ের মূল চরিত্র হামবার্ট । নাবোকভের লোলিটা সম্পর্কে আমার নিজের মত যদি বলি, এটি একটি শিল্পসম্মত কাজ, হয়তো খোলামেলা ভাবে তুলে ধরা হয়েছে একটি অতীত স্মৃতির ক্ষত থেকে উৎসারিত মনোবেদন, বর্তমান আন্যাবেলের ভেতর অতীত লোলিটাকে খোঁজার প্রয়াস এক অপূর্ণ ভালোবাসার হাহাকার। অন্য অনেকের সাথে নভোকভের পার্থক্য হল তিনি সাহসের সাথে খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করেছেন মনের ভাবনা । খোলামেলা ভাষার ব্যবহার বইটির প্রায় পুরোটা জুড়েই। বিতর্কিত এ উপন্যাসটি অবলম্বনে ১৯৬২ সালে স্ট্যানলি কিউব্রিক একটি সিনেমাও নির্মাণ করেন। সেটিও আলোচিত সমালোচিত হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। এ বিতর্কে কিন্তু লাভই হয়েছিলো ভ্লাদিমির নাবোকভের। না হলে তার নামটা হয়তো গোটা বিশ্ব দূরে থাক সেন্ট পিটার্সবার্গের মানুষরাই জানত না। ১৯৭৭ সালের ২ জুলাই রাশিয়ান এ বিতর্কিত লেখক ভ্লাদিমির ৭৭ বছর বয়সে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
( চলমান )