পেট যার আছে, ক্ষুধা তাকে মানিয়ে যায়,
ঠিক মানিয়ে যায়।
সে রোহিঙ্গা হোক কিংবা বাঙ্গালী,
রাশিয়ান কিংবা এশিয়ান।
ক্ষুধা খুব অবাক হয়,
পেটের আবার ভেদাভেদ কি?
পেট যার শরীরের অঙ্গ,
ক্ষুধা তাকেই মানায়,
ছোট একটা অঙ্গ,
শরীরটাকে কি অবলীলায় নাচায়।


ছোট বেলায় স্কুলে একটা গল্প পড়েছিলাম,
পণ্ডিত মশাই।
একুনে আটজনের সংসারে বেতন পঁচিশ টাকা।
লাট সাহেবের তিন ঠ্যাঙ্গের কুকুরের জন্য মাস প্রতি ব্যয় পঁচাত্তর,
পণ্ডিত মশাই ঐকিক অংক করতে বলেছিলেন।
বিষয়টা গল্প বলেই জেনেছিলাম,
পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিলো,গল্পের নাম করনের সার্থকতা আলোচনা কর,
বাংলা শিক্ষকের দেয়া হ্যান্ড নোটের জোরে ঐ বৈতরণী পার হয়েছিলাম।


চারজনের সংসারে বাবা তখন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ,
দুজন ছাত্র, একজন গৃহিণী,
হেসে খেলে জীবন পার ,
পণ্ডিত মশাইয়ের গল্পটিকে মনে হতো,প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা।
তারপর একটার পর একটা ক্লাসের বেড়া টপকেছি,
পণ্ডিত মশাইয়ের বর্ণীত অভাব দেখিনি,
মনে মনে ভাবতাম, ধুর,এসব বানানো গল্প।
এখন পণ্ডিত মশাইও নাই,
লাট সাহেবের কুত্তাও নাই।


বারো ক্লাসের পরীক্ষা দিচ্ছি,রাত জেগে পড়াশুনা করি,
এরকম এক রাতে বাবা মারা গেলেন।
হুট করে সব পাল্টে গেল,
পরিবেশ, পরিস্থিতি, সামাজিকতা……
অল্পদিনেই চোখের সামনে পণ্ডিত মশাই চলে এলেন,
লাট সাহেবের কুত্তাও দেখি তখন আশেপাশে!
সেই থেকে অভাব শব্দটিকে জানি।
সেই থেকে ক্ষুধার স্বরূপ অনুমান করতে শিখেছি।


পণ্ডিত মশাই গল্পটা লেখা হয়েছিল আজ থেকে একশ বছর আগের প্রেক্ষাপটে,
কিন্তু আমি তো বিংশ শতাব্দীর মানুষ,
ব্রিটিশদের সেই নিপীড়ন, নির্যাতন তো এখন নেই,
তবুও এখন কেন সেই প্রাগৈতিহাসিক চর্চা অব্যাহত থাকবে?
ক্ষুধার অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে,পরিচিত বাহুজোড়ায় বিশ্বাস করে
মানুষের কাছে গিয়েছিলাম,
এক ভয়ানক গ্লানিমাখা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পড়ে ছিলো বোধের কঙ্কাল,
হলুদ চোখ মগজ গলে বেরিয়ে আসে,
বোধ নেই,স্থিতি নেই,যেন দাঁড়িয়ে আছি অনাহারী নক্ষত্র।


এখন আমি দেখি একজন পণ্ডিত মশাই,
লাট সাহেবের কুত্তা
তিনটি ঠ্যাং.........।
©
#হাসান_কামরুল।
০৯/১০/২০১৭।।