প্রথম পাওয়া সেই প্রেম পত্র
মনের মণিকোঠার এক ঝলমলে চিত্র,
পেলাম; সাত-সাতটা পত্র দেবার পর
মনে হলে নিভৃতে হাসি; করে বুক ধড়ফড়,
তারপর; কত দেখলাম, কত লেখলাম
প্রথমটাই; দাগ কেটে রইলো জীবনভর,
কম্পমান কচিহাতের ত্রস্ততায় লেখা
সেই চিঠিতে ছিল সাতাশটা বানান ভুল
আমি গোল দাগ দিয়ে নিয়ে বসে আছি
সামনে এলেই বাঁধাবো মহা-গন্ডগোল,
বেশ ক’দিন যায়, দেখা পাইনা আর
পড়লাম পত্রটা প্রায় একশো সাতাশবার,
ভুলে ভরা; লাইনগুলো সব বাঁকা-তেরা
খুঁজছি মনে মনে; লাগাবো আমি ছেঁড়াবেড়া।
শেষ শরতের শুভ্র বিকেল
নীলাকাশে সাদা মেঘের অলস ঊড়াঊড়ি
টেপ রেকর্ডারে “মান্না দে’র” গান শুনছি
পেছন হতে কাঁধে আলতো পরশ পেলাম তারই,
ওরে বাবা! আমি আর কি বলি!
যেন ভুল হয়েছে সব আমারি,
গনগনে চোখে বলে, “এই যে সাহেব”
তুমি কি আমার টিচার?
পত্র লিখেছি; এই কত্তো বেশি
করতে চাও আবার বিচার!
আমি ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে চেয়ে থাকি
হঠাৎ নেতিয়ে গেল আমার “একলা পাখি”,
বুকে মাথা গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বলে
জানো তুমি? কত কষ্টে আমি এটা লিখেছি?
এক অক্ষর লিখেছি আর বুকে থুঁ-থুঁ দিয়েছি
সবাই ঘুমালে; কুপিটাও নিভু-নিভু
পণ করেছিলাম নিভে গেলেও লিখবো তবু,
খাতা ছেঁড়া পাতায়; শুধু ভালবাসাই মেখেছি
তোমায় দেব বলে কতো যত্নে লুকিয়ে রেখেছি,
কয়দিনতো স্কুলে নিয়ে; আবার এনেছি ফিরিয়ে
পাইনি তোমায়; যে পথে যাও; থেকেছি দাড়িয়ে,
লাগে শুধু ভয়; পাছে কারো হাতে পড়ে
বে-খেয়ালে ফেলি যদি আমি আবার হারিয়ে।
আমি চুলের বেণীতে আলগোছে হাত বুলাই
চুমু এঁকে দেই অধরে,
অকৃত্রিম ভালবাসার নির্মল সুবাতাস
ঢেউ খেলে যায় দু-জনার অন্দরে,
চোখে চোখ রেখে বলে-
কি গো! সবই পেলে তুমি ভুল?
বাঁকাতেরা লাইন; বানানের যত দোষ
জেনো; ভালবাসায় ভুল নেই একচুল,
হোক শত ভুল পত্রে; প্রতি ছত্রে-ছত্রে
কভু জল ঝরাইওনা মোর নেত্রে,
শুধু এই আশীষ করো
হাত দুটি মোর শক্ত করে ধরো
হয়না যেন এমন একটিও ভালবাসার ভুল
দূরত্ব না হয় যেন মোদের অ-ছোঁয়া একচুল।