এরই মধ্যে বারকয়েক দারোয়ানীর চাকুরীটা
বদলেছে সে-
এ বিল্ডিং থেকে ও বিল্ডিং ;
"মালিকেরা খাওন ফালাইয়া দ্যায় তবু দারোয়ানরে দ্যায়না
অার অমন মোটা পোশাকটা গতরে দিলে খসখস করে" ,
মনে তিরিক্কি দিয়া এখন সে রিক্সা চালায়;
প্রথম যেদিন রিক্সা চালানো শুরু করে-
ভু্ল করে এক ফিট্ বাবুর পালিশ্ করা বুট জুতায়
পিক্ ফেলে কষা এক থাপ্পর খেয়ে
খিক্ করে হেসে দিয়েছিল,
কিন্তু মনে মনে জ্বলেছিল খুব !
এখন তবু পেট পুরে খায়
চটে ঘেরা ড্রেনের উপরকার হোটেলে
অার বাড়ীর জন্যও কিছু জমায়-
দারোয়ানীতে পেট পুরে খাবার জুটতনা
মেমসাবদের কচকচানিতো ছিলই ;
ভরদুপুরের কড়া রোদে সে রিক্সার উপরই
ঝিরায়, লেকপারের নাম না জানা গাছের নিচে,
তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে
মেন্দির মায়ের কয়দিনকার না খাওয়া
শুকিয়ে যাওয়া মুখ; মেন্দিদের অসহাত্ব,
লেকের বদ্ধ জলের গায়ে শ্যাওলা ধরা
মাছগুলোর সাথে সে নিজেকে মেলায় !
শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত সে
যাত্রী নিয়ে ছুটে বেড়ায়-
বিজলী রঙ্গীন হাতিরঝিলের জল
জৌলুসমাখানো স্বপ্ন শপিংমল
তার চোখে জ্বালা ধরায় ; অার
শহরের কাচঘেরা অনেক খাবারের সে তো
নামই জানেনা !
বনরুটি অার সাগরকলার সাথেই
তার খুব পরিচয়;
অার বস্তির যে খুপড়িতে সে থাকে
ঐ গলির মাথায় - যে মাঝবয়সী
মোটাগাটা মহিলাটা ভাগা দিয়া কাঁচামরিচ
অার কুঁকড়ানো সবজি বিক্রি করে
তার সাথে;
ক্লিষ্ট জীবনে মেন্দির বাপে এই ভেবে
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মুখ ভরে বিড়ির
ধোঁয়া ছাড়ে-
" এই নিষ্প্রাণ শহরে অামাদের সংখ্যাই বেশি,
পৃথিবীতেও কি?"