কবিতাঃ হবে তো?
কবিঃ শরীফ এমদাদ হোসেন।
মাননীয় কবি শরীফ এমদাদ হোসেন মহাশয়ের “হবে তো?” কবিতাটি আমাকে দারুন ভাবে অকৃষ্ট করেছে। যদি ভালো লাগার কারন বলি তাহলে বলতে হয় কবিতাটিতে একটা কব্যিক রূপ তো আছেই সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কাব্যের সাথে সাথে একটা যেন গ্রাম্য জীবনের মাটির গন্ধ জড়িয়ে আছে কবিতাটির মধ্যে। প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের মেলবন্ধন, তার সঙ্গে একটা গোষ্ঠী মানুষের (কৃষক) সুখ দুঃখের জীবন কাহিনী সুন্দর ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যা আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে গভীর ভাবে। তাই নিজের মতো করে এই কবিতাটির বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।
মাননীয় কবি প্রথমেই একটা জিঞ্জাসা চিহ্ন দিয়ে শুরু করলেন, হবে তো?। একটা সংশয় জড়িত মন। আজানা ভবিষ্যৎ জানিনা কি হবে। এই সংশয়টা সমস্ত কৃষক বন্ধুর মনে এক সময়ে তাড়া করে বেড়ায়। যা দিয়েছি ঢেলে ধরণীর তলে, ফিরে পাবো তো আগামী’কালে। বড় ভয় জীবন সংশয়, অভাব ছড়িয়ে আছে সারা ঘরময়। রোপণ কালে প্রত্যেক কৃষক তার ঘরের কোন থেকে সমস্ত সম্পদ ঢেলে দেয় মাঠে সোনালী ফসল ফলানোর আশায়। ঘরে আভাবের ছায়া। পরক্ষণেই কবির প্রকাশ ‘সে জমি আমার মা’। সত্যি তো। জামি মায়ের সমান। মা যে ভাবে তার হাজার কষ্ট সহ্য করে সন্তানের মুখে আহার তুলে দেন। ঠিক সেই ভাবে এই জমিও নীরবে সহ্য করেছে শরীরে হালের ফলার আঁচড়, বিষ ও সারের তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা। এতো সব যন্ত্রণা সহ্য করেও চাষিকে তুলে দেয় সোনালী ফসল সন্তান স্নেহে। সন্তান হয় সুখী মায়ের আশীর্বাদে। তাই কবিতায় কবি লিখছেন- “মায়ের মমতায় ফলা ফসলে আমাদের পেট ভরে”।
এর পরেই কবি লিখছেন-
“উনুনে চড়ে ফোটে যে চাল সে চালে জোছনা মাখা”।
কি অপূর্ব মনোমুগ্ধকর কবির কাব্যিক ভাবনা। এই চাল একদিনে হয়নি। অনেক পূর্ণিমার জোছনা গায়ে মেখে ধীরে ধীরে চালে পরিণত হয়েছে। সেই চালে আছে জোছনা মাখানো। যথার্থ লিখেছেন কবি প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের মেলবন্ধন।
আবার কবি লিখছেন-
“ তার সাথে পূবের বিলের শাপলা আর দেশী পুঁটির ঝোল, পঞ্চ ব্যঞ্জন কি করে উত্তম হয়?” ।
বরেণ্য কবি গভীর ভাবনায় খুব সুন্দর ভাবে সময়টাকে পর পর সাজিয়েছেন। যখন ধান কাটা হয় তখন জমিনে খুব অল্প অল্প জল থাকে। সেই জলে বেশি ভাগ সময় এই শাপলা আর দেশী পুঁটি পাওয়া যায়। তাই একটি কৃষকের ঘরে নতুন ধানের চালের ভাত আর শাপলা ও দেশী পুঁটির ঝোল অমৃত সমান। সেখানে পঞ্চ ব্যঞ্জনের স্বাদ বিলিন হয়ে যাবে। তাই কবি জিঙ্গাসার সুরে বলেছেন- পঞ্চ ব্যঞ্জন কি করে উত্তম হয়?”। এই বিগত দিনের ভাবনাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল কৃষকের মনে। এবার আবার এসেছে আশ্বিনমাস ক্ষেত ভরে আছে সবুজ ধানে আগামী্র স্বপ্ন দেখার পালা।
তাই কবি লিখছেন-
“এই আশ্বিনে নাচছে গাভীন ধানের শীষ, স্বপ্ন আগামীর। কানাকুয়া ডাকা দুঃখী রাত পেরিয়ে আসবে নবান্ন”।
অপূর্ব কাব্যশৈলী। শরতের হালকা বাতাসে দোলা দিচ্ছে ধানগাছ, পেটে নিয়ে চাষির আগামীর স্বপ্ন। আর কিছু দিনের মধ্যেই মাঠ ভরে যাবে সোনালী ধানে। যেটার অপেক্ষায় চাষি বসেছিলেন এতো দিন ধরে। নিশ্ছিদ্র নিস্তব্দ অন্ধকার রাতে ভয় ধরানো কানাকুয়া পাখির কুপ-কুপ ডাক যেন হৃদয়ে কাঁটা দেয় । এই বুঝি এলো অশুভ সংকেত। কবি আশা জাগিয়েছে প্রানে। এই ভয়ার্ত রাত কেটে যাবে উদিত হবে নতুন সূর্য। আসবে নবান্ন উৎসব। কৃষকের ঘরে বয়ে যাবে খুশির হাওয়া। পরক্ষণেই কবি ভাবনা থেকে নেমে আসে কঠোর বাস্তবের মাটিতে। আবার সেই সংশয় এবছর যা ফসল আসবে ঘরে, সেই ফসলে সংসার চলবে তো? হবে তো সেই ফসল দিয়ে সকলের ক্ষুধার নিবৃত্তি?।
আসলে সকল কৃষকের জমিই হল বেঁচে থাকার প্রেরণা। কাদামাটি মাটি মেখেও আনন্দ অনুভব করে মায়ের কোলের স্বাদ। কিন্তু একটা সংশয় প্রতি বছর গুরপাক খায় কৃষকের মনে’ হবে তো?
সম্মানীয় কবি শরীফ এমদাদ হোসেন মহাশয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এমন সুন্দর একটা কবিতা উপহার দেওয়ার জন্য।
[ কবিতা পড়ে আমার নিজস্ব অনুভূতি এখানে প্রকাশ করলাম। পাঠকগনের মুল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম]
আসরের সকল কবি্র জন্য আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। সুন্দর থাকুন। ধন্যবাদ!