একদিন আজও জ্বলজ্বলে সেদিন,
মাত্র বছর আটেক হবো বোধহয়,
সবে দশ ঘর নামতা পেরিয়েছি
পড়াশুনোর তেমন কোন টান ছিল না
টান ছিল হাতুড়ি ছেনি নিয়ে নক্সা কাটার ৷
সেই হাতুড়ি
সেই ছেনি আজও অক্ষত
কিছুটা বিবর্ণ মরচের রাসায়নিক ক্রিয়ায়;
ভাঙা শ্লেট আর ক্ষয়িষ্ণু পেনসিলের
জবরদস্ত ঘর্ষণে
জীবনের অক্ষর গুলোর দাগ কাটতে থাকতাম,
সেই অক্ষর গুলোকে পার্কার কলমে আজ
আচড় দিতে চেষ্টা করেও পারলাম না ৷
আজ বড়ো হয়েছি পকেটের আয়তনে,
বড়ো হয়েছি বিলাসিতার দাম্ভিক চাকচিক্কে ৷
আজ আমার অনেক প্লাস পয়েন্ট---
আজ আমার খুব নাম ডাক৷
পর্টির নেতা থেকে
ক্লাবের দাপুটে সদস্য সকলেই
জানে আমার প্লাস পয়েন্ট,
তাই সব সভা অনুষ্ঠানে আমি
প্রধান অতিথির পদে অলঙ্কৃত৷
আর আমার মেধাবহুল
স্কুলের সহপাঠী ,
আজ সে ঠেলাগাড়ির চটপটি ওয়ালা,
যথেষ্ট মেধা থাকা স্বত্বেও
তার পকেট অর্ধনিমীলিত
অসহায় আয়তনের পকেটে লটারীর
ছেঁড়া টিকিট গুলো গজগজ করতে থাকে৷
তার আজ কোন প্লাস পয়েন্ট কেউ দেখতে পায়নি....
সে শুধু সত্য আর ন্যায়ের কাছে
আমানত করে বেঁচে চলছে,
বেঁচে চলেছে জীবন সংসারের মহা সমরে
লড়াইয়ের পর লড়াই করে ৷
মাঝে আমার সামনা সামনি হয় আর
নির্বাক অবনত নয়নে ভাবতে থাকে,
আর আমাকে ভাবতে শেখায়
জীবনের প্লাস পয়েন্ট কি?
শুধু বেনিয়ম আর অনিয়মের উপার্জনে
জীবনের কোন প্লাস পয়েন্ট হয় না,
প্লাস পয়েন্ট শুধু লালায়িত উচ্চাকাঙ্ক্ষী
স্বার্থান্বেষী মানুষদের বোধহীনতার কাছে,
আমি মাঝে মাঝে
কেঁদে উঠি
কাঁদতেও ভালোবাসি
তাদের জন্য
যারা জীবনের প্লাস পয়েন্টে থেকে
সর্বস্ব উজাড় করে
মাইনাস পয়েন্টের ফিতে কাটা
সততার কাছে বারে বারে জয়ী হয় ৷
তাদের জন্য আজও প্রতি বৃহস্পতি বারে
বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয় ,
তুলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বলে
সকলের জন্যে মঙ্গল শঙ্খধ্বনি বেঁজে ওঠে৷
আমার কাছে তারাই প্লাস পয়েন্ট ,
এই অবক্ষয় সমাজের কাছে তারাই
একমাত্র প্লাস পয়েন্ট ৷৷