প্রাক্ বসন্তে যখন স্বপ্নাবিষ্ট মন উন্মুখ হয়ে ওঠে,
যখন সবুজ বনানীতে উঁকি দেয় নব কিশলয় ,
বিটপীতে ভেসে ওঠে হাসির ফোয়ারা ,
গুঞ্জরণে মুখরিত হয় দিকে দিকে পুষ্পবীথি ,
কল-কাকলিতে ভরে ওঠে গোধূলি কানন ,
আমিও ছিলাম সেই আনন্দঘন অনাস্বাদিত
শুভ মূহুর্তের প্রত্যাশায় বিভোর় ।
'বিনা মেঘে বজ্রপাত' ঘটে গেল
পুষ্পবীথির সিংহ-দুয়ারে !
ছায়া প্রদানকারী সুবিস্তীর্ণ বটবৃক্ষটা নিথর নিস্তব্ধ ,
সবুজ পাতার আচ্ছাদনটা বিলীন হয়ে গেল
মহাকালের অমোঘ নির্দেশে ।
ঝরে গেল ফুল বাগিচার সব পুষ্পকোরক ,
পাতা গুলি সব ঝলসে হয়ে গেল বিবর্ণ ,
প্রতীক্ষিত কৃষ্ণভোমরটা দিকভ্রান্ত হয়ে হতবাক ,
পশ্চিমা ঝড়ের যুগপৎ তাণ্ডবে সবকিছু ছিন্নভিন্ন ।
অভুক্ত কাটিয়ে দিয়েছি
অগণিত দিনের ক্ষুধার্ত মূহুর্তগুলি ,
বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত হয়েছে
আশঙ্কার সাইরেনে ,
উদভ্রান্তের মতো টলতে টলতে লুকিয়ে লুকিয়ে
পৌঁছে গেলাম সীমান্তের সীমারেখা পেরিয়ে ,
দাঁড়ালাম বুভুক্ষুদের সুদীর্ঘ প্রতীক্ষমাণ সারিতে ।
তারপর ঝাঁপ দিলাম অনিশ্চয়তার সুদীর্ঘ
সুগভীর উত্তাল স্রোতধারায় ,
কিনারার কাছাকাছি যখন পৌঁছলাম--
এক দুঃসাহসিকা সাহচর্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে
হৃদয়ের দৃঢ়তায় ; কিনারার হদিশ পেলাম না ।
ছিটকে পড়ে গেলাম দুজনেই
খরস্রোতের তীরভাঙা ধারায় ।
খাবি খাচ্ছি করে করে উজান পথে চলতে লাগলো
হাতে হাত রেখে লড়াই করে করে
এগিয়ে যাবার অদম্য চেষ্টা ;
বারবার ব্যর্থতার চরম কষাঘাতে দীর্ণ করে তুলেছে
জীবনের প্রতিটা স্তবকের প্রত্যেকটি কোষ।
পড়ন্ত বেলায় সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে ঢলে পড়েছে
তখন দেখতে পেলাম-- সমতল বেলাতটের
অস্পষ্ট হাতছানি।
====সমাপ্ত====