(পঞ্চম দোল উপলক্ষে নিবেদন)

এক মুঠো নয় !
মাত্র এক চিমটে আবির চেয়েছিল
ক্ষুদ্র দুটো হাতের অঞ্জলিতে ধরা
এক টুকরো জীর্ণ মলিন কাগজের ভাঁজে !

না দেখার ভান করে ফিরিয়ে নিল
দোলকর্তার ঘৃণা বিজড়িত
অনীহা ও অবজ্ঞার ছায়ায় ঢাকা মুখ ;
অপ্রত্যাশিত আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছিল
আট বছরের পিতৃহারা অবোধ শিশুটির বুক ।

চেয়েছিল সে--তার ইষ্ট দেবতার চরণ-কমল
আবিরের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে এতটুকু তৃপ্ত হতে ;
কেউ বুঝলো না তার আবেগের ভাষা,
বুঝলো না তার মর্মস্থলের অব্যক্ত বেদনা!

চোখ মুছতে মুছতে ফিরে এলো আহত শিশুটি--
কঠোর পরিশ্রমে পরিশ্রান্ত স্বেদসিক্ত মায়ের
নিবিড় প্রশান্তিময় আঁচলের ছায়ায় ;
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে মায়ের চিবুক ধরে বললো--
'একটু আবির এনে দেবে , মা ?'

গোধূলি বেলায় মা ফিরে এলো কাজ ছেড়ে ,
হাতে ছোট্ট একটা পুঁটুলি এক মুঠো আবিরের ;
অব্যক্ত এক আনন্দঘন আবেগে আপ্লুত শিশুটি !
তর সইল না তার , লুটিয়ে পড়লো মায়ের পদমূলে;
রাঙিয়ে দিল তার পদতল।

তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল
পুরোনো মাধবী ঝাড়টার কাছে ,
যেখানে শেষ হয়েছিল বাবার অন্তিম যাত্রা ;
সমাধি বেদির পাদদেশে নতজানু হয়ে
ছড়িয়ে দিল আবিরের বাকি অংশটুকু ।
অশ্রুধারায় রক্তাক্ত হয়ে গেল গোটা সমাধি-বেদি ।

অতীন্দ্রিয় জগতে পৌঁছে গেল সে !
সে দেখতে পেল--সেখানে নেই কোনো ঘৃণা ,
নেই কোনো অবহেলা , শুধু অনাবিল শান্তি !
ঠিক যেন তার মায়ের কোমল কোলের মতো ;
হঠাৎ সে চোখ খুলে তাকালো--
মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে আবার
সান্ত্বনার বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়লো সে।

        =====সমাপ্ত====