হে বিশ্বকবির 'দেশনায়ক' ! কিংবদন্তি নেতাজী !
আম জনতার প্রাণের দেবতা !
সিংহ পরাক্রমী অগ্নিস্ফুলিঙ্গ !
হে রহস্যময় শৌর্যস্তম্ভ !
স্বদেশপ্রেমের অতুল্য প্রতীক ,
তোমায় জানাই অন্তস্তলের সশ্রদ্ধ প্রণতি।
'দিল্লী চলো'-র তূর্য নিনাদ আজও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে
বাংলার আকাশে বাতাসে ,অলিতে গলিতে ;
তোমার মতো দেশপ্রেমিক খুঁজে বেড়াচ্ছে
কোটি কোটি বঞ্চিত অতৃপ্ত ভারতবাসী ।
হে ক্ষণজন্মা বীরশ্রেষ্ঠ ধ্রুবতারা!
বিরল এক অমৃতক্ষণে আবির্ভূত হয়েছিলে তুমি
কটকের ঘনীভূত গুরু-গম্ভীর মেঘলা আকাশে,
রবিকরোজ্জ্বল আলোকের জ্যোতি নিয়ে
তুমি ঠিকরে পড়েছিলে উত্তাল বাংলার
ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ।
কৈশোরের সুকোমলবৃত্তির মাঝেই অঙ্কুরিত
তোমার প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত হয়েছে বারবার সাম্রাজ্যবাদী বেনিয়াদের
অমানবিক সহিংস দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ।
রাজনীতির যুদ্ধাঙ্গনে অবতীর্ণ হতেই
তুমি বরণীয় হয়েছিলে বিভিন্ন সম্মানজনক উচ্চাসনে;
কম্পিত হয়ে ওঠে প্রশাসনের কন্টকিত আরশ ,
তাইতো তোমায় কাটাতে হয় বারবার
নিষ্ঠুর কারা প্রাচীরের অন্তরালে ।
রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে
তুমি অবতীর্ণ হলে নতুন দলের কান্ডারী হয়ে ।
বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্কর দামামা ,
তোমার মতো অগ্নিস্ফুলিঙ্গ কারান্তরালে রেখেও
স্বস্তির ঘুম উবে গিয়েছিল ব্রিটিশের শ্যেন চক্ষু থেকে।
অন্তরীণ হলে নিজের বাড়িতেই ; শাপে হলো বর ,
পালিয়ে গেলে ছদ্মবেশে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে ,
প্রত্যক্ষ আঘাতের প্রয়োজন উপলব্ধি করে ।
বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে
জীবনের চরমতম ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপ দিলে
মহাসাগরের কালো জলে ডুবন্ত
জার্মান সাবমেরিন থেকে জাপানের বন্ধু সাবমেরিনে ;
দায়িত্ব নিলে আজাদহিন্দ বাহিনীর ,
গড়ে তুললে স্বাধীন ভারত সরকার ;
স্বাধীন করলে মনিপুর ,
জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিলে ইম্ফলের
রক্ত-ভেজা অবিস্মরণীয় মাটির বুকে ।
বিশ্বযুদ্ধের চরমতম আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল
তোমার সুদূর প্রসারিত সমস্ত পরিকল্পনা ।
পদ-লোভী রাজনৈতিক ভিক্ষুকেরা তোমার সঙ্গে
করলো প্রতারণা ! মাতৃভূমির করলো ব্যবচ্ছেদ !
মাতৃভূমির রক্তক্ষরণ আর উদ্বাস্তুদের চোখের জলে
ভাসতে ভাসতে খিড়কির অন্ধকার পথে
আবির্ভূত হলো অসহায় স্বাধীনতা ।
ব্যর্থ হয়ে গেল--- ভারতবর্ষের সমস্ত প্রত্যাশা
আর তোমার অকৃত্রিম সুমহান দেশপ্রেম!
====সমাপ্ত====