১) দক্ষিণ কাছাড়ের জন্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজন কতটুকু?
"সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজ ও সভ্যতার মানবিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধন সম্ভাবিত হয়। সাহিত্যচর্চা করার প্রথাটা সভ্যতার একটা প্রধান অঙ্গ।" – প্রমথ চৌধুরী
আমরা যাঁরা বাংলায় লেখালেখি করি,সে হোক কবিতা বা অকবিতা,গল্প বা নিজ হৃদয়ের কথা,আমরা যেন সর্বদা লেখিয়ে যাই,এই প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে,আমাদের লেখা যেন অন্যদেরকে উৎসাহিত করে,বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে যে কিছু বাংলায় লেখার,কিছু করার ও বাংলাকে হৃদয়ে সম্মান করা শিখাতে হবে।
আমরা যাঁরা বাংলাকে হৃদয়কোঠায় জায়গা দিয়েছি ও প্রয়োজনে বাংলার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, তাঁদের জন্য একটি বাস্তব মাসিক সাহিত্য আসরের প্রয়োজন,সেখানে সবাই নিজের স্বরচিত লেখাকে আসরে তুলে ধরবে,ইহার মাধ্যমে আমরা এক-অপরের চিন্তাধারা,লেখনশৈলী ও মাতৃভাষা প্রেমকে ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারবো,কার লেখায় কোথায় কোথায় সমস্যা,কোন জায়গাটার পরিবর্তন করা দরকার,ইত্যাদি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা সম্ভব,যা নতুনদের জন্য অনেক দরকার।আসলে,সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প নাই,আমরা যদি কোনো সাহিত্যের ইতিহাস পড়ি, নিশ্চয়,দেখতে পাবো যে,সাহিত্য আসর বা আড্ডার কতটুকু ভূমিকা আছে,যেমন ঢাকার বিউটি বের্ডিং,ও কলকাতার কফি হাউস আজ তাই ইতিহাসের অংশ,সাহিত্য আসর/আড্ডা না হলে সাহিত্যচর্চা কিসের।সাহিত্য আসর/আড্ডার ফলস্বরূপ নিশ্চয় উক্ত এলাকায় তরুণ কবি,লেখক,সাহিত্যিক ও সাহিত্যি প্রেমিকদের জন্ম হবো।
মাসে একদিন মিলিত হলে আমাদের মধ্যে আন্তরিকতা,পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি হবে,আর চেনাজানার পরিধি বাড়লে ক্ষতি হয় না বরং লাভই হয়।
২) স্কুলকলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে কিভাবে সাহিত্য চর্চার জন্ম হবে?
স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সাহিত্য চর্চা আসবে নিম্নরূপ :-
ক) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাহিত্য ভয় দূর করতে হবে,যেমন- কবিতা বা গল্প লেখা আমার দিয়ে হবে না,আমি তো কবিগুরু বা বিদ্রোহী কবি নয়,এই মনোভাবটি বর্তমানে প্রায় পড়ুয়াদের মধ্যে বিদ্যমান।
খ) ভাষা বীর সেনানীদের জীবনী ওদের সম্মুখে তুলে ধরতে হবে,নিশ্চয় ওদের হৃদয় মাতৃভাষা প্রেমিক হয়ে উঠবে।
গ) বাংলা ভাষায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি ও ১৯ শে মে এর গুরুত্ব,ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে কেন লেখা আছে,ইহার বিশদ বর্ণনা তুলে ধরতে হবে।
ঘ) সবার সম্মুখে এসে কিছু বলার উৎসাহ দিতে হবে,ইহা সাহিত্য চর্চার একটি অঙ্গ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের পর্যায়।
ঙ) সাহিত্য চর্চা শিক্ষার একটি অঙ্গ,ইহা ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়।
চ) প্রতিটি স্কুলকলেজে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাহিত্য আসর অনুষ্ঠান করতে হবে।স্থানীয় ও বাইরের কবি,গল্পকার ও সাহিত্যিকদের মূল্যবান বক্তব্য শুনে পড়ুয়াদের মধ্যে সাহিত্য প্রেম ও সাহিত্য জগতে আসার ইন্ধন জোগাবে।
ছ) স্কুলভিত্তিক ও কলেজভিত্তিক সাহিত্য আসর করতে হবে,পুরস্কার ও মানপত্র প্রদানে নিশ্চয় ওদের সাহিত্য প্রতিভার জন্ম হবে।
৩) সাহিত্য আসরটি কি দীর্ঘস্থায়ী হবে?
নিশ্চয়, ঐ সাহিত্য আসরটি দীর্ঘস্থায়ী হবে,কেননা আমরা সবাই নিজের চেয়ে বেশী মাতৃভাষা বাংলাকে ভালোবাসি,আর সাহিত্য আসরকে বাস্তব, সার্থক ও দীর্ঘস্থায়ী করতে যাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে ওদের মধ্যে অর্ধাধিক সদস্যরা হলেন মিতালিয়ান,যাঁরা বরাকে নিজের লেখার মাধ্যমে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে মাতৃভাষা প্রেমের মনোভাব,বাংলার টান ও বন্ধনরূপে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি কয়েকটি পংক্তির মধ্যে বলছি.:__
আমরা পারবো,
আমরা করবো,
আমরা বাঙালীরূপে নিজের পরিচয় সবার সম্মুখে তুলে ধরবো।
বাধাবিঘ্ন নত হবে, আমারোর কাছে,
ঝড়তুফানকে ভয় করেনা,
কখনো এই তরুণদের দল।
বাংলার ঘরে জনম আমারোর,
সাহিত্য আড্ডা সর্বদা হবে,
বরাকের প্রত্যক ঘরে-ঘরে।
মাসিক সাহিত্য আসর হবেই,
সোনাই মাধব চন্দ্র দাস কলেজে,
বরাক সাহিত্য আসরে সোনাই সর্বদা শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
৪) সাহিত্য আড্ডা গ্রুপে দেওয়া স্যারের চিঠিটি কি আমরা তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদেরকে উৎসাহিত করবে?
"যে দেশের সাহিত্য সম্মৃদ্ধ নয়, সে দেশের সংস্কৃতি সম্মৃদ্ধ হতে পারে না।"
- সাহিত্য বাজারের একটি স্লোগান।
নিশ্চয়, চিঠিটা আমাদেরকে সাহিত্য ইন্ধন যোগাবে, আমি শ্রদ্ধেয় স্যারের চিঠিটা পড়ে,একদিকে খুশিতে ভরে গেলাম,আর অন্য দিকে উনার চিঠির প্রথমাংশটি পড়ে বড্ড দুঃখ লাগলো যে উনি অনেক কিছু করেছেন শুধু বাংলার জন্য,বাঙালীর তরে।কিন্তু হয়তো অনেকে সহযোগিতা করতে পারতেন,কেউ হয়তো ব্যক্তিস্বার্থ ছেড়ে বাংলার জন্য আসতে চায়নি,কিন্তু আবারো জন্মসূত্রে নিজেকে বাঙালী বলে।ঘরে বসে বাংলায় কানাকানি করলে,বাঙালী হতে পারবে, কিন্তু বাংলা প্রেমী হতে পারবে না,তার জন্য প্রয়োজন বাংলা নিয়ে কিছু ভাবা,কিছু করা।আমাদের স্যার সোনাই এলাকায় সাহিত্য চর্চার জন্য অনেক কষ্ট করছেন,আর কষ্ট করতে দিবো না আমরা,আপনার কষ্টগুলি আজ থেকে আমাদের,এই প্রতিজ্ঞা রইলো আমরা তরুণের
।
৫) বরাকের তরুণ সাহিত্য প্রেমিকদের জন্য সাহিত্য পত্রিকার ভূমিকা কতটুকু?
বর্তমান সময়ে সাহিত্য পত্রিকার ভূমিকা অপরিসীম।নবীন ও প্রবীণ সাহিত্যিকদের লেখনী দেখে সবার বাঙালী হৃদয় জাগ্রত হবে,সবার চিন্তাধারার জন্ম হবে।সবাই এক হতে পারবে,আমাদের মধ্যে ঐক্য,মিলন ও অগণিত সাহিত্য ভালোবাসার জন্ম হবে বলে আশাবাদী। আর আমাদের সাহিত্য পত্রিকাটি কলকাতার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হবে,ইহার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত আছি,আমরা শারীরিক,মানসিক, আর্থিক ও সর্বদিক দিয়ে সহযোগিতা করতে অপেক্ষারত থাকবো।
মৃত্যু হবে একদিন
তাহা সত্য না মিথ্যা
নিশ্চয় সবাই জানে।
ঘরে বসে মরার চেয়ে বাংলা সাহিত্য প্রেমিক
হয়ে মরা ভালো।
ইহা আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা আপনার(শ্রদ্ধেয় ডাঃ আব্দুল মতিন লস্কর স্যার) সাথে কাজ করতে পারবো,আপনার কাছ থেকে অনেক অনেক আদেশ,উপদেশ ও পরামর্শ পাবো,যাহা আমাদেরকে প্রকৃত মাতৃভাষাপ্রেমী ও সৎ নাগরিক করে গড়ে তুলবে।আপনার সাথে আমরা চলতে পারবো দেখে আমাদের জীবনপথে সাহিত্য ফুলে-ফুলে ভরে যাবে,ইনশাআল্লাহ,আপনাকে অন্তরের অন্তস্থল জানাই একরাশ ধন্যবাদ ও আকাশসম শ্রদ্ধা।আমরা সর্বদা আপনার ও সাহিত্য আসরের সাথে আছি।
তাই আসুন আমাদের অমূল্য সম্পদ মেধা এবং সময় থাকতে নিজের, সমাজের, জাতির ও সভ্যতার মানবিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করি।সবাইকে একরাশ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা,বিশেষ করে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্যার শ্রদ্ধেয় আব্দুল মতিন লস্কর মহাশয়কে জানাই আমাদের সালাম ও শ্রদ্ধা।ইনশাআল্লাহ,আমরা সাফল্য পাবো,বাংলাকে আবার প্রত্যক বাঙালীর ঘরে-ঘরে নিয়ে যাবো,আশা করি যে,বরাকের প্রত্যক ঘরে-ঘরে সাহিত্যপ্রেমীর জন্ম হবে ও প্রত্যক গ্রামে কবি,লেখক ও সাহিত্যিকের জন্ম হবে।