একটি কবিতা লিখবো বলে-
যাই ছুটে ক্ষীণকায় ইছামতির পড়ন্ত বেলায়  
কার্তিকে কিষাণীর ঘামে ভেজা নবান্ন মেলায়
আসি ফিরে পৌষের সোনাঝরা রোদের তলায়
কবিতার কৃষ্ণ বর্ণমালা লভে রূপ কলম ফলায়।      

একটি কবিতা লিখবো বলে-
কত যুগ গেল কেটে আরো কত শতাব্দি মহাকাল তলে
অশান্ত বাধায় শত কবিতারা হয় নীল ছোবলে ছোবলে
নক্ষত্ররাজির কাছে গেছি ছ‍ুটে চাইতে ধার দু’টি পংক্তিমালা
বর্ণ একটি দিয়ে ধার বলেছে ওরা সাজিয়ে নাও ডাল পালা।    

একটি কবিতা লিখবো বলে-
হিমালয় আলপ্সের জমাট বরফ বুকে শ্বেত ভালুক সাজি
অঙ্গারে বর্ণমালা লিখি ভিসুভিয়াস ফুজিয়ামায় ধরি বাজি
সূর্যের হিলিয়াম ঝড়ে বসে ভাবি কবিতার তাল-লয়-সুর
কবিতার ছন্দমালা কবিতা হতে যোজন যোজন বর্ষ দূর।  

একটি কবিতা লিখবো বলে-
ডাস্টবিন পাশে বসি দেখি যুদ্ধ মানুষ আর বিড়াল কুকুরে
ডুব সাঁতার খেলা শেষে উঠি ভেসে হাবুদের তালের পুকুরে
দিননাথ জাগার আগে চাতকী প্রতিক্ষা শিশিরের দু’ফোঁটা জল
ভরা ভাদরের লাগি ভিক মাগি মিনেরা পাক আয়ু জলে টলমল।

একটি কবিতা লিখবো বলে-
খোদাই সরাব পিয়ে শুনি বুদ্ধের অমেয় অহিংস বাণী সুধা
খ্রীস্ট বুদ্ধ আর অর্জুনে আছে মিশে খোদা কে করিবে জুদা
হামদ্ শুনে মসজিদে কীর্তন গেয়ে মন্দিরে বেহুঁশ হয়ে রই
সাম্যের অমেয় বাণী কবিতায় টেনে আনি জগৎ করে হইচই।

একটি কবিতা লিখবো বলে-
ধ্যানে বসি নজরুল সুকান্ত রুদ্র আর বিদ্যাসাগরের মুখ আঁকি
কিটস্ বায়রণ শেলীর পংক্তি মেলে ভাবের অতলে ডুবে থাকি
আল মাহমুদ ইকবাল থেকে কবিতার কৃষ্ণ বর্ণমালা শিখে শিখে
কবিতার ভাবখানা আসে যায় আবার কখনো তা হয়ে যায় ফিকে।

একটি কবিতা লিখবো বলে-
বেড়াই চষে আমার দোআঁশ মাটির খামার খেত আর নদী জল
বহমান খরস্রোতা কাঁদে আর চায় ফিরে তাহার স্বরূপ কলকল
চাকমা মারমা মুরং মগ রাখাইন সাথে সেতুর বাঁধনে গড়ি নীড়
কবিতার নিগুঢ় প্রেম সকল সৃষ্টি মাঝে রয় মিশে ছায়া সুনিবিড়।

একটি কবিতা লিখবো বলে-
প্রাচ্যের বেলাভূমি ত্যাগি প্রতিচ্যের মেহমান সাজি ভিখেরির বেশে
কালের খেয়াতরি অসীমের পানে ধায় কবিতার ঘাটে দেশে দেশে
বকের সাদা পাল নীলিমায় লভে স্থান আবার ফিরে আলয়ে আপন
কবিতা হয় না লেখা খেয়ালের ধুসর ফাঁদে খাবি খায় উদাসী এ মন।