শ্রাবণের ধারায় ভরাও আমার ভাবনার আকাশটাকে,
সিক্ত হতে চাই নতুন করে আবার।
নব পল্লব নিয়ে শাখাতরু যবে জাগরিত হয় অরণ্যে,
আমি তাদের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই
নিঃশর্ত, নিঃস্বার্থ, নিগূঢ় ভাবে চির হরিৎ পত্র হয়ে।
ব্যথিত বকুল যবে ঝরে পড়ে রয় অগোচরে,
আমি নির্বাক নয়নে চেয়ে রই সেই পানে-
প্রাণেতে আমার প্রবিষ্ট হয়, তাদের আঁখি হতে
ঝরে যাওয়া বারিধারা। আমি তার স্বাক্ষী হয়ে
রয়ে যেতে চাই সেথা, শারদ প্রাতে ঝরা বকুলের ফুলে।
বোশেখের ঝড়ে, যবে, হন্যে হয়ে খুঁজে ফেরে বিহগী
তার নীড় হারা সাথীরে। আমি তার পাশে একটিবারের তরে
দাঁড়াবারে চাই, আর কইতে চাই নতস্বরে,
“কেঁদোনাকো, সামনের ভরা জোসনায়
ঠিকই ফিরে পাবে তারে”।
জ্যৈষ্ঠের ভরা রোদে, ক্লিষ্ট পথিক যবে
পথ হারিয়ে আলুথালু চেয়ে রয়, গগনের পানে
আমি একটা বটবৃক্ষ হয়ে
তারে ছায়া দিতে চাই, যাতে করে সে আবার
ফিরে পায়, তার হারানো স্বস্তি।
হিমালয় হতে, ঝর্ণার জল যবে
নিরবধি বয়ে যায়, সাগরের সাথে বিলীন হবার তরে,
আমি সেই নব যৌবনা স্রোতের সাথে
নিজেরেও বিলীন করে দিতে চাই।
অবোধ শিশু যবে, মায়ের আঁচলে মাথা রেখে
প্রথম বোল তুলে কয়, “মা”। আমি সেই প্রহরের
স্বাক্ষী হতে চাই, আর ছড়িয়ে দিতে চাই
তারস্বরে তার কন্ঠটারে, সারা পৃথিবী জুড়ে।
(“মেঘের আড়াল” কাব্য থেকে)