যুগল কবিতা

১। একুশের প্রহরে
হাকিকুর রহমান

ওরা মরেনি, মরিতে পারেনা।

ওরা বেঁচে আছে, সকল বাঙালির হৃদয়ের অভ্যন্তরে
আর অশরীরী আত্মার আলোক ছড়ায়, প্রতিটি অন্তরে।
এই জগতে কত জাতি আছে- এসেছে- গেছে,
বলতে কি পারো? কতজন ভাষার জন্যে শহীদ হয়েছে?

এসেছিলে এদেশে ক্ষণজন্মা হয়ে,
হয়েছো আজ নীহারিকা
তাপিত, তাড়িত, তটিনীর দেশে,
জ্বলে থাকো হয়ে দীপশিখা।

কে বলে তোমরা নেই!
যখনই তাকাই পথে-প্রান্তরে,
অজস্র-অগনিত লোকের ভীড়ে
সেই মুখগুলি, ভাসেতো আঁখিতে, নীরবেই।

দিয়েছো মোদেরে সমৃদ্ধ করে,
দিয়েছো বাঁচিবার অধিকার
দেখেছি মোরা চেতনার আলো,
জাগিয়েছো হৃদয়ে আকুতি স্বাধীকার।

আজি এ প্রহরে সময় এসেছে,
শানিত করিতে সেই চেতনা
উদ্বুদ্ধ হই, এই অরুণালোকে,
আর নয় কোন অনুশোচনা।

(“৫২ থেকে ৭১” কাব্য থেকে)

২। রক্তভেজা সার্ট
হাকিকুর রহমান

রক্তভেজা সার্টটাকে সরায়ে রাখেনি মা,
অন্যত্র-
খাঁটের পাশেই ঝোলানো রয়েছে,
সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাতে
মনে করিয়ে দেয় তার উপস্থিতি
ওই দাওয়ায়।

বন্ধুরা রণাঙ্গন থেকে ওই একটাই শেষ স্মৃতি
ফিরিয়ে এনেছিলো-
বাকি আর কিছুই আনতে পারেনি।
শত্রুর গোলায়, গ্রেনেডের আক্রমনে
সমস্ত শরীরটা হয়ে গিয়েছিলো, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন-
ছিলোনা কিছুই অবশিষ্ট।

সে এক অবধারিত মৃত্যু, যাতে কোন শোক নেই-
যাতে আছে দেশ মাতৃকার প্রতি গভীর ভালোবাসার
প্রকাশ। যা, রয়ে যাবে অনন্তকাল ধরে।

তাই মা, কখনও সরালোনা ওটাকে-
চোখ বুজে অনুভব করে, পরাণের ধন
সন্তানের উপস্থিতি,
যার স্মৃতি কখনই ভোলার নয়।
সে যে এদেশের সূর্যসন্তান,
সে যে মৃত্যুহীন প্রাণ।