বইমেলা আমাকে সেই ছোট্ট থেকেই প্রচন্ড টানে।কারণ বই পড়তে আমি বড্ড ভালোবাসি। প্রায় সব রকমের বই ই পড়ি।এর মধ্যে গল্প-কবিতা উপন্যাস ভালো লাগার শীর্ষে।রোমান্টিক,কমেডি এই দুই ক্যাটাগরির হলে তো কথাই নেই।
যত ঝামেলা-অসুবিধা কিংবা দুশ্চিন্তায় থাকুক না কেনো। একদিনেই মস্ত বড় উপন্যাসের-গল্প-কবিতার বইটা পড়ে শেষ করে ফেলি।
এই তো গত বছরের ফেব্রুয়ারির কথা বলছি।তখন আমার মেট্রিক পরীক্ষা চলে।আমার বন্ধুরা সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে।মেট্রিক পরীক্ষা বলে কথা।শুধু আমার বন্ধুরা কেনো?বাংলাদেশের প্রত্যেকটা পরীক্ষার্থীই সেই মূহুর্তে সিরিয়াস মোডে পড়াশোনা করে।
আর আমি হচ্ছি উল্টো!সবার থেকে বিপরীত!এমন ভাব ধরে আছি যেনো সব পারি। পড়াশোনা নেই।কোনো চিন্তা নেই।অন্তত পরীক্ষার আগে রাতে যতই অমনোযোগী ছাত্র হোক, যতই দূর্বল ছাত্র হোক পড়াশোনা করে।
আর আমি, হ্যা! আমিও পড়াশোনা করেছি কিন্তু একাডেমিক পড়াশোনা না।পরীক্ষার পড়া না পড়ে।পড়েছি উপন্যাস।
একটা কথা কি জানেন,আমার মাথায় যখন একটা কিছু চাপে সেটা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত আমি শান্তি পাই না।তো সেদিন আমার সম্ভবত পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিলো।স্কুলে যতবার লাড্ডু পেয়েছি। তার সবকটাই পদার্থ বিজ্ঞানে।
প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো। দু বছরে যা শিখতে পেরেছি তাই মোটামুটি পারি।
পাশ করতে পারবো এ বিশ্বাস আমার ছিলো।তো পড়ার টেবিলে বসে আছি।হ্যা!পদার্থ বিজ্ঞান বই নিয়ে। আর সাথে উপন্যাসের বইটাও।তবে দুইটা আলাদা আলাদা না।মানে হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের মাঝখানে উপন্যাসের বইটা রেখে দিয়ে উপন্যাস পড়তেছি।যেনো কেউ না বুঝতে পারে।আমি পড়াশোনা বাদ দিয়ে উপন্যাস পড়তেছি।
তো উপন্যাস পড়া রাত নয়টার দিকে শুরু করলাম। পড়তে পড়তে মনে হলো আমি যেনো রোমাঞ্চকর মূহুর্তে দাড়িয়ে আছি।কখন যে উপন্যাসটা শেষ হয়ে গেলো। বুঝতেই পারলাম না।উপন্যাসের বইটা রেখে ঘড়ি দেখতে গেলাম।ওমা! রাত তিনটা বাজে প্রায়।আর কী! সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে উঠতে হবে তো।
এই হচ্ছে আমার উপন্যাসের প্রতি অন্ধ ভালোবাসার একটি উদাহরণ।
যাই হোক,গতবারের বইমেলার কথা বলছি।পরীক্ষা চলতেছে।পরীক্ষা শেষ করেই হল থেকে বের হয়েই সোজা বইমেলার উদ্দেশ্য রওনা। আহা! কি অদ্ভুত সুন্দর মূহুর্ত কেটেছে।বলার মতো ভাষা আমার জানা নেই।বইমেলায় দুইটা জিনিস আমাকে খুব টানে।একটা হচ্ছে নতুন বইয়ের অদ্ভুত ঘ্রাণ।আরেকটা হচ্ছে লেখক-পাঠকদের সাথে দেখা করা আর আড্ডা।সেইবার পুরো একটা দিন আলিফ ভাইয়ের স্টলে ছিলাম। দারুন কেটেছে বইমেলার ঐ দিনটা। এখন অনেক মিস করছি।এইবার অবশ্য বইমেলায় যাওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে।কিন্তু সাহস পাচ্ছি না।করোনার জন্য। কখন কী হয়ে যায় বলা মুশকিল। অবশ্যই কদিন থেকে সাহস করে যাওয়ার কথা ভাবছি।কিন্তু এই রিস্ক নিয়েই লাভ কী।আগের মতো তো আর মজা হবে না।মূহুর্তগুলো অসাধারণ হয়ে উঠবে না। লেখকদের সাথে সেইভাবে আড্ডা টা তো জমে উঠবে না।বইমেলার মাঠ তো এখন প্রায় পুরোরাটাই ফাঁকা।
আহা!বইমেলা খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার জন্য আমার।একটি বছর পর এসেছো দেখা করতে।এতকাছে তবুও দেখতে যেতে পারছি না তোমাকে।তবে দেখা হবে খুব দ্রুত। এই দুঃসময় শেষ হবে একদিন। তোমার সাথে দেখা করার প্রতীক্ষায় রইলাম।