সুদূর গাঁয়ের ওই মেয়েটি
নাম ছিল তার রানি,                                                                 দিন কি রাতে বুনত স্বপন
সবাই সেটা জানি।

বন-বাদারে ঘুরত রানি
থাকত মুখে গান,
বানর-হনু-কাঠবিড়ালি
করত কত ভান।

ফুল-পাতা- ফল- চঞ্চলাদল
করত সব-ই লুট,
চলত খেলা সারাবেলা
বউছি গোল্লাছুট।

খেলতে গিয়ে ভাবের ঘোরে
কতো কী যে ভাবত,
টিকলি পরে ঘোমটা টেনে
নতুন বধু সাজত।

খেলার সাথি হবে রাজা
মনের রাজ্যে তার,
কাছে এসে বলবে ,"বধূ
মুখটা কেন ভার"!

ভাবতে ভাবতে ছুটিয়ে বেলা
বড় হলো যেদিন,
হঠাৎ করেই ভাবনার কড়া
নড়ে গেল সেদিন,

টোপর মাথায় রাজা এসে
নেয় বধূ কে বুকে,
চোখভরা তার রঙিন স্বপ্ন
ভাসবে সত্যি সুখে।

তারপর ;
হারিয়ে যেত সাগর ঢেউয়ে
নীলজল করত  ফিসফাস,
মনের মধ্যে ভালোবাসার
ছড়িয়ে দিত সুবাস।

কখনো বা যেত তারা
কাশবন ও বাঁশবনে,
বাঁশের পাতার মিষ্টি সুরে
হারাতো দুজনে।

নীল আকাশের ভেলায় করে
ভাসত নীলজলে,
গোলাপ জুঁইয়ের মালা গেঁথে
পরত তারা গলে।

কাশফুলেরই পালকে চড়ে
যেতো মেঘের দেশে,
গড়ত বাসর আকাশধোয়া
নীলজল যেথায় মেশে।

এখন ;
ওই মেয়েটির ঘরে বাইরে
বাড়ে কাজের বোঝ,
এই এখুনি ঠেলে হেসেল
অফিস করে রোজ।

তাকে ঘিরে ঢেউরা করে
বেদনারই ফিসফাস,
হৃদয়ে তার শোক- সমাহার
ছড়ায় তিক্ত সুবাস।

মেয়েটির মন ছুটে না আর
স্বপ্ন বুনার তরে,
আলো- আঁধার শরতের ভাব
চলছে তার মনভরে।

রাজা এখন করে না আর
তেমন একটা খোঁজ,
চুপিচুপি কাজের ফাঁকে
কাঁদে মেয়েটি রোজ।