ব্যাঙের মতো জলের উপর অস্ফুটে মাথা রেখে তুলে
চোরা ডাক ডাকিতেছে সূর্য পৃথিবীর বিপন্ন আঁধারের পারে;
সমস্ত দিবসের স্বেদ ধীরপদে জমিতেছে ঘাস থেকে শিমুলে;
কর্তব্য ফুরায়ে আশ্বিন মুদিতেছে আঁখি কার্তিকের নির্মল পাঁজরে
শুয়ে- যেমন শুয়ে আছি আমি ঠান্ডা মাটির ক্রোড়ে
আরাম করে, দেখিতেছি ফড়িং যেতেছে ভেসে হাওয়ার পিঠে চড়ে।
ভিজিতেছে ফসলের গা, তার চেয়ে বেশি কৃষকের প্রাণ
ভিজে যায়- হলুদ আলো জ্বলিবে বলে গৃহস্থ কোণায়
তার; যে সফেদ দুগ্ধ নেমে যায় তৃষ্ণার্ত বাছুরের সটান
গলা বেয়ে- তেমনই আশারা তাহার আঙিনায়
আসিতেছে নেমে, তার বুকে উঠিতেছে জ্বলে;
আমি দেখিতেছি তারে শুয়ে এই আকাশের তলে।
নদীঘাট ছাড়িয়াছে কবে রূপসী মায়াবিনী বধূ;
জল লয়ে গেছে এই মেঠোপথ ধরে বৈঠা বাওয়া ডিঙির মতন-
আমি দেখিয়াছি তারে; দেখিয়াছি ওই নদীর বুকে শুধু
শুশুক, চিলের স্বতঃস্ফূর্ত আনাগোনা; ক্লান্তি যাপন
করিতেছে বসে নকশীগাঙের মাঝি
ভাটিয়ালি সুরে- আমারেও সে ডাকিতেছে বুঝি!
নক্ষত্ররা আসিবে বলে আলো যাইতেছে নিভে-
কুয়াশার ওমে মনে পড়ে যায় এক সুনিপুণ নারী
এসেছিল একবার আমার দগ্ধ আকাশে এমন সপ্রতিভে,
এখন আবার আসিয়াছে সে; এই রাত্রিকালে কোনো প্রহরী
কি আমারে বাঁচাবে না তাহার থেকে?
এমন-ই সে জাগিয়া রহিবে এই আর্দ্র বুকে?
চলে যেতে পারে সে- তাহার তুষের মতো প্রেম; তবুও এ ভূমি
আমারে স্নিগ্ধতা ক্রমান্বয়ে করিতে থাকিবে দান-
এ আমি জানি; এই দেশ, দেশের হৃদয় থেকে আমি
যেই প্রেম পেয়েছি খুঁজে- তাহার ব্যবধান
করিতে পারিবে না কেহ এই ভঙ্গুর দেহে,
বহিবে অবিরাম তাহা- এ দেশের বুকে এই নদী যেমন বহে।