শহরে পড়তে আসা শিউলি,
শ্যামলা রং  , টানা টানা চোখ,
ঠোঁটের নিচে কালো তিল।
সাদা দাঁতের সারি থেকে
একটা দাঁত উঁকি মারতো,
এত সুন্দর হাসি জীবনে
আর কখনো দেখিনি।

কেমন এক মায়া,
একটু রাশভারী
শহরে এসে ও শহর থেকে অনেক দূর
মনে হয় কোনো এক লড়াই তে এসেছে।
এক টুকরো শিক্ষা জিতে নিতে।

সবাই স্যার সম্বোধন করলেও
শিউলি মাস্টার বলে ডাকতো আমায়।
মাস্টারি তে তখনও হাত পাকেনি
সদ্য স্নাতক, লাজুকতা কাটেনি।

শিউলি প্রায়শই বলতো
আপনার হাতের লেখা
আমার খুব ভালো লাগে।
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়
আর একটি বাক্যের।
নাহ্   ওই টুকু প্রশংসা প্রাপ্য।
শুধু হাতের লেখা!

হটাৎ  একদিন শিউলি অনুপস্থিত।  
শিউলি হীন , গন্ধহীন কক্ষে
মন বসেনা কিছুতেই।
পাছে জানতে পারলাম
হটাৎ গ্রামে চলে গেছে।
সহপাঠিনী র হাতে এক খান
চিরকুট দিয়েছে আমার জন্যে।

প্রিয় মাস্টার মশাই
বাড়ী থেকে খবর এসেছে।
বাবা অসুস্থ হটাৎ ,
মৃত্যুর সাথে চলছে লড়াই ।
চোলাই মদ বিষক্রিয়া
গ্রামের প্রত্যেকটা পুরুষ আক্রান্ত প্রায়।
বাবা চলে গেলে পড়াশুনার পাঠ চুলোয়।
এক বুক আশা মাঝনদীতে ডুবু ডুবু।
মাস্টার
আপনার ঠিকানা
মোবাইল নাম্বার টা আমার কাছে রইলো।
আমি ঠিক যোগাযোগ করে নেবো।
আমি আবার আসবো।

শুনেছি কয়েক কিলোমিটার পথ
হেঁটে হেঁটে যেতে হয়,
বিদ্যুৎ নেই ,
টেলিফোন নেই।
মোবাইল টাওয়ার নেই,
হাসপাতাল নেই।
হাই স্কুল নেই।
এত কিছু নেই এর মাঝে
আছে শুধু শিউলি।

কয়েক মাস
কয়েক বছর
কয়েক দশক,
শিউলির কোনো খবর নেই।

ওদের ক্লাসের ছেলে মেয়েরা
অনেকই চাকরিরত ,
কেউ  ব্যাবসা ফাদিয়েছে।
মাঝে মধ্যে যোগাযোগ করে ,
অনেকের কল আসে মোবাইলে।

অনেক চিঠিপত্র
বিজ্ঞাপনঃ সহ
বিদ্যুতের বিল
জমা হয় পত্র বক্সে।
শিউলির চিঠি
শিউলির কল কোনোদিন আসেনি।
প্রতিদিন বাড়ীর উঠোনে
ঝরে পড়ে গন্ধহীন বর্ণহীন শিউলি।