মুহূর্ত'রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।

যুগে যুগে ঘুরে ঘুরে
সভ্যতার সীমানা পারিয়ে
অসভ্যদের হিংস্র থাবাগুলো যখন
মনুষ্যত্বের গলা চেপে ধরে
এ মুহূর্ত'রা তখন ফিরে আসে বারে বারে।
মুহূর্ত'রা এখন তোমার
নিষ্পেষিত মানুষের কান্না থামাবার।

সতেরশো উনো নব্বইয়ের এর ১৭ জুন
এ মুহূর্ত'রা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে নেমে এসেছিল
প্যারিসের টেনিস কোর্টে
লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
"স্বাধীনতা-সমতা-ভ্রাতৃত্ব অথবা মৃত্যু"
এই শপথ গ্রহণ করেছিল
আর বুর্জোয়াদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছিল।

আঠারো-শো ছিয়াশি সালের ১লা মে
শ্রমিকদের যখন মেশিনের মতো উৎপাদন-যন্ত্র
বানানোর জন্য চলছিল ষড়যন্ত্র
এই মুহূর্ত'রা তখন নেমে  এসেছিল  
শিকাগোর হে-মার্কেট স্কয়ারে
হাজার হাজার শ্রমিক সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
আর শ্রমিকরা মানুষের মর্যদা পেয়েছিল।

উনিশ্য বাহান্ন সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি
মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার জন্য
যখন ষড়যন্ত্র চলছিল
এ মুহূর্ত'রা তখন নেমে এসেছিল
রফিক বরকত'রা সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
আর বাঙলার বুকে বাঙলা ভাষাকে আগলে রেখেছিল।

এ মুহূর্ত'রা এখন তোমার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।

উনিশ্য একাত্তর সালের ২৫শে মার্চ
এ মুহূর্ত'রা বাংলার ঘরে ঘরে এসেছিল
সকল বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
তিরিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল
আকাশে বাতাসে মানুষের আর্তনাদ ছিল
শুধু কিছু বাঙালীর বাঙলা শত্রুরা হেসেছিল
তবুও পরাধীনতা থেকে বাঙলাকে মুক্ত করেছিল।

উনিশ্য সাতাশি সালের ১০ই জুন
স্বৈরাচারের আস্ফালন দিয়েছিল মাথাচাড়া
আর নেমে এসেছিল এ মুহূর্ত'রা
খালি গায়ে বুকে-পিঠে স্লোগান লিখেছিল
আর মুক্তিকামী জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
আর স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল।

দুই হাজার বারোর ৩০ জানুয়ারি
মুদ্রা শোষকেরা যখন এ দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের
জীবনের জমানো সবটুকু সঞ্চয় শুষে নিচ্ছিল
গোপীবাগের লিয়াকত আলী সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
আর মুদ্রা শোষকদের নিস্তব্ধ করেছিল।

যুগে যুগে এ মুহূর্ত'রা আসে ফিরে ফিরে
রক্তচোষা রাক্ষসেরা যখন
সমাজের রক্ত শুষে শুষে ভক্ষণ করে
সত্য ন্যায়ের বলিষ্ঠ কণ্ঠ খামছে ধরে
রক্তের হলিখেলা করে
আর তর্জন গর্জন হুঙ্কার করে
এ মুহূর্ত'রা তখন আসে ফিরে।

এখন মুহূর্ত'রা এখন তোমার
নিষ্পেষিত মানুষের কান্না থামাবার
তৈরি থেকো যে কোনও সময়ে
আসবে ডাক ঝাঁপিয়ে পড়ার।