ফেসবুকে তোমার বিয়ের ছবিগুলো দেখার পর থেকেই রাগে প্রচণ্ড ছটফট করছি-
কী রকম বাজে ছবি তুলেছে ক্যামেরাম্যান!
তোমার বিয়ের  ছবি দেখার পর থেকেই মাথায় রক্ত উঠে আছে আমার।
যদি এক্ষুনি সামনে পেতাম এই ক্যামেরাম্যানকে
নির্ঘাত খুন করে ফেলতাম।
তোমাকে কেমন মায়াহীন লাগছে ছবিগুলোতে।
তোমার চোখের মায়াগুলো একটুও ভেসে ওঠেনি একটা ছবিতেও।
তোমার মায়াটুকু এডিট করে মায়াহীন এক নারীর মতো করে ফেলেছে।

তোমার চোখের এই মায়াটুকু দেখার জন্য
আমি একটা দোতালা বাড়ির উল্টোদিকে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বছরের পর বছর
একটার পর একটা সিগারেটের পুড়িয়েছি,
এই ক্যামেরাম্যান যদি জানতো আমার এই গল্পটুকু
সে অন্তত এডিট করে তোমার এই মায়াটুকু মুছে দেবার স্পর্ধা দেখাত না।

তোমার ঠোঁটের ডানদিকের খুনি কালো তিলটাকেও এডিট করে মুছে দিয়েছে এই বোকা ক্যামেরাম্যান,
কেউ জানে না
কেউ জানবেও না,
শুধু এই ঠোঁটের কালো তিলে
একটিবার নির্লজ্জের মতো খুন হবার জন্য
আমি দিনরাত ভিক্ষুকের মতো তোমার কাছে হাত পেতেছি,
বারবার তোমার বন্ধ দরজায় নক করেছি।

তুমি রাগ না করলে একটি সত্যি কথা বলি,
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্রি কদাকার চেহারার বরের ছবিটি
প্রচন্ড এডিট করা,
বুঝলে প্রচন্ড এডিট করা!
এডিট করতে করতে বরের চেহারা সুন্দর করে তোমার যোগ্য করে তুলেছে ক্যামেরাম্যান।
আমি শিউর,
এই ক্যামেরাম্যানকে বর পক্ষ ভাড়া করেছে,
তাই সে এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে।

যতই এডিট করুক
দেখলেই বুঝা যায়
তোমার বরের চেহারায় মায়া মমতা আর ভালোবাসার তিলমাত্র কোনো চিহ্ন নেই,
এমন বাজে চেহারার মানুষকে কি তুমি মায়া করবে;
তোমার ঠোঁটের কালো তিলে খুন হতে দিবে তাকে ?

তুমি কি এখনও আমার ফেইসবুকের প্রোফাইলে ঘুরে বেড়াও?
যদি ঘুরতে
তবে দেখতে পেতে
আমার সব ছবিই এখন হাসিখুশি
ক্লিন সেভ করা
ঝকঝকে চকচকে ছবি
খুব যত্ন করে এডিট করে তারপর
ফেসবুকে দেই
সবাই যেন ভাবে
খুব সুখে আছি আমি আজকাল।

ইদানিং ফেইসবুকে এডিট করা আমার ঝকঝকে চকচকে ছবিতে
অসংখ্য লাইক আর লাভ পাই,
সবাই কমেন্টে লিখে,
‘সুন্দর ছবি,
সুখী চেহারা,
স্মার্ট লাগছে
আরো কতো কী!

তুমি কি আমার নতুন প্রোফাইল পিকচার দেখো আজকাল?
তোমার চোখের মায়া আর ঠোঁটের কালো তিলটার কসম খেয়ে বলছি,
আমার আগের এডিটহীন,
অনেকদিন না-কাটা দাড়ি
আর অগোছালো চেহারার প্রোফাইল পিকচারে,
আমি অনেক সুখে ছিলাম,
বেঁচে ছিলাম।
———-
রশিদ হারুন
২৯/০১/২০২৫
ক্যালগেরি, কানাডা