পঞ্চাশের পর থেকে প্রায়ই ঘুমের মাঝে স্বপ্নে প্রচণ্ড জলতেষ্টায়
আমি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কীভাবে যেন এক
নদীর পারে চলে যাই,
দু’হাত মুঠো করে নদীর জল বুকে টেনে নেবার বৃথা চেষ্টা করি,
আঙুলের ফাঁক দিয়ে সব জল আবার নদীর জলেই মিশে যায়।
পিপাসায় অস্থির হয়ে শেষমেষ জলেই ঝাঁপ দেই
ডুব দিয়ে বুকের ভিতর পুরোটা জলে ভরে
জল থেকে মাথা উঁচু করতেই দেখি জলের মাঝে
ভটভট আওয়াজ তুলে একটা জলযান চলে যাচ্ছে
‘বেঙ্গল ওয়াটার’ - ঢাকা- চাঁদপুর-ঢাকা ।
সেই জলযানের দোতালার রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আট- নয় বছরের এক বালক -
তার কোমর জড়িয়ে বসে থাকেন এক নারী
আর কাঁধে হাত রেখে এক পুরুষ।
যতক্ষণ দৃষ্টিসীমায় থাকে সেই বালক উচ্ছ্বসিত হয়ে আমার দিকে হাত নাঁড়তেই থাকে
আর পুরুষ আর নারীটি এক মায়াময় হাসি মুখে তাকিয়েই থাকেন।
অদৃশ্য হবার আগ পর্যন্ত আমিও তাকিয়ে থাকি তাদের দিকে,
হাত উঁচু করে নাড়তেই থাকি-
নাড়তেই থাকি।
সেই জলযান হারিয়ে যাবার পরই মনে পড়ে নারী আর পুরুষটির চেহারা আমার বাবা-মা’র যৌবন বয়সের ছবির সাথে হুবহু মিলে যায়;
আর বালকটির চেহারা অ্যালবামে যত্নে রাখা আমার হাফপ্যান্ট পরা সাদা কালো ছবির মতোই একই রকম।
জলযানটি হারিয়ে গেলেই বুকে আমার তীব্র পিপাসা পেয়ে বসে আবার!
সারারাত এভাবেই ডুব দিয়ে বুকের ভিতর পুরোটা জলে ভরে
থেকে মাথা উঁচু করলেই দেখি নদীতে
ভটভট আওয়াজ তুলে একই জলযান চলে যাচ্ছে,
‘বেঙ্গল ওয়াটার’ - ঢাকা- চাঁদপুর-ঢাকা,
সেই তিনজন মানুষ একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি এখন প্রায়ই প্রতিদিন খুব সকালে সদরঘাটে গিয়ে ‘বেঙ্গল ওয়াটার’ জলযানে উঠে প্রত্যেকটা মানুষের চেহারায় সেই মানুষগুলোকে খুঁজি
তারপর সেই জলযান চাঁদপুরের দিকে রওয়ানা দেবার আগেই নেমে যাই-
ঘাটে দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখি,
আর চলে যেতে দেখি আমার একজীবন।
—————-
রশিদ হারুন
০২/০৯/২০২৪
মন্ট্রিয়াল, কানাডা