কেউ যদি জানতে চায় আমার বয়স কত,
আমি কিছুক্ষণ তার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তারপর একসময় আনমনে হয়ত বলে ফেলি
বেশি না,
এই ধরুন হাজার হাজার জীবন।

মানুষটি আমাকে পাগল ভাবতে পারে
এই আবোল-তাবোল উত্তরে,
অথচ আমিই জানি একজীবনে আমার খরচ হয়ে গেছে কয়েক জীবন।

বালক বেলায় বৃষ্টির দিনে কাদা মাঠে ফুটবল খেলে পার করেছি কয়েক জীবন,
পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে ভেসে গেছে কতো যে জীবন,
শীতের দিনে কুয়াশা ভেজা মাটিতে খালি পায়ে আনমনে হেটে হেটে কুয়াশায় হারিয়েছে অজস্র জীবন,
পাশের মহল্লার এক সরকারি আমলার বাড়ির দেয়ালের ওপারে একটা ডালিম গাছের লাল ডালিমের দিকে তাকিয়ে গেছে কমপক্ষে দুই জীবন।

স্টীমার বেঙ্গল ওয়াটের ডেকে দাঁড়িয়ে পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া নদীর জলের স্রোতের সাথে স্রোত হয়ে পার করেছি সাতাশ জীবন।
স্কুল ফাঁকি দিয়ে অভিসার আর মধুমিতা সিনেমা হলে স্বপ্ন দেখেতে দেখতে চলে গেছে অসংখ্য জীবন,
বাবা মাকে ফাঁকি দিয়ে বাবার বাইসাইকেল চালিয়ে  উত্তেজনায় পার করেছি অনেক জীবন।

একটা মায়াবী চোখের টানে মোটর সাইকেল দাবড়িয়ে বেড়িয়েছি বেহিসাবী হাজার জীবন,
ব্যাকুল প্রতীক্ষারত হাজার হাজার বছর দাঁড়িয়ে ছিলাম কমলাপুর রেলস্টেশনে এক বালিকার ছটফটানি হাতের স্পর্শের জন্য।

অভিমান, অপমান, প্রতারণা আর ঘৃনায় খরচ হয়ে গেছে অগণ্য জীবন।
বেকার জীবনে শূণ্য মানিব্যাগের হাহাকার শুনতে শুনতে রাস্তায় রোদে পুড়েছি বোধহীন কয়েক জীবন;
বাবা-মার লাশ কবরে নামাতে নামাতে বুক পিষে চলে গিয়েছিল হাজারো জীবন।
বন্ধু আর প্রিয় মানুষদের সাথে হাসিখুশিতে পার করেছি মুহূর্তে চলে যাওয়া জীবন আর জীবন।

তাই কেউ যদি জানতে চায় আমার বয়স কত
আমি কখনোই সঠিক উত্তর দিতে পারি না,
আমার একজীবনে কত হাজারো জীবন বুক পিষে চলে গেছে আমি হিসাব রাখিনি।
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমাদের কত জীবন যে চলে যায় কেউ জানে না-
অন্তত আমি জানি না।

হঠাৎ করে বুকের দখিনের জানালায় যদি কোনো হারিয়ে যাওয়া কবিতা টোকা দেয়,
তখনই টের পাই হাজারো জীবন পার করে এখনও ঠিকই বেঁচে আছি।
————
রশিদ হারুন
২৭/০৬/২০২৩