জীবনের শেষ চক্রে এসে
‘মানুষ’ হতে না পারার তীব্র মনোবেদনা আর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
যেদিনই ঘুমিয়ে পড়ি,
সকালে উঠলেই দেখি
আমার দাদা বাড়ির হারিয়ে যাওয়া পুকুরটা
আমার পুরো ঘর জুড়ে শুয়ে আছে,
সেখানে কিছু কচুরীপানা আর শাপলা ফুলবতী হয়ে ভাসছে;
মাঝে মাঝে একটা বিরহী কোকিল আকুল হয়ে আমাকে ডাকে,
একটা মাছরাঙা পাখি মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকে শাপলা পাতার উপর,
একটা লাল খইলশা মাছ দূর থেকে সেই মাছরাঙাকে দেখে হেসে উঠে,
সেই হাসি দেখে মাছরাঙাও হেসে ফেলে আচমকা!
তখনই বিছানাটা দাদার নিজ হাতে ফুল আঁকা নৌকা হয়ে আমাকে নিয়ে পুকুরে ভেসে বেড়ায়
তাই দেখে আমিও মন খুলে হাসি আর হাসি।
জীবনের শেষ অংকে এসে টের পেলাম
‘মানুষ’ হওয়ার সাধ বুকে থাকলে
বুকটা অন্তত শীতল থাকে শান্ত পুকুরের জলে।
সেই জলে মাছরাঙা আর মাছ পরস্পরকে দেখে
হেসে উঠতে পারে অনায়াসে।
মুহূর্তেই ওয়ারিশ হয়ে উঠতে পারি দাদার প্রিয় নৌকাটির,
শাপলা আর কচুরীপানার ফুলকে মনে হয় পৃথিবীর সুন্দরতম ফুল
আমিও সেদিন হাসতে পারি বুক ভরে।
‘মানুষ’ হওয়ার জন্য জীবন কি ভাবে খরচ করতে হয়
এই অংক আমি শিখতে গিয়ে ফাঁকি দিয়েছি সারাজীবন
একজীবন পার করে দিয়েছি ধার্মিক সাঁজার অংকে
বড় ব্যাবসী, চাকর আর নেতা হওয়ার অংকে
পুরো শরীরে পাহাড়সম ক্ষমতা পাওয়ার অংকে।
তাইতো আমার ‘ঘুম ঘরে’ দাদার বাড়ির পুকুর কখনো ভাসেনি
আমি একবারও হাসতে পারিনি ’সত্য মানুষ’ এর মতো করে।
জীবনে
একবার তুমি মানুষ হবার সাধ করে দেখো
সেদিন অন্তত ‘সত্য মানুষ’ এর মত হাসতে পারবে।
——————
রশিদ হারুন
০৭/১২/২০২৪
ক্যালগেরি, কানাডা