ইদানীং প্রায়  প্রতিদিন রাতের ঘুমে একই স্বপ্ন দেখি-
এক অসীম ধুধু মাঠে মন খারাপ করে
আমি একলা দাঁড়িয়ে আছি অনন্ত সময় ধরে।
তারপর,
তারপর একসময় কে যেন আমার কাঁধে হাত রেখে বলে,
‘চল পালাই’।
আমি চমকে তাকিয়ে দেখি
আমার কাঁধে বন্ধু শাহেদের হাত।

শাহেদ আমার হাত শক্ত করে ধরে
আমাকে একরকম উড়িয়ে বাতাসে শিষ তুলে দৌড় শুরু করে।
দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় অসীম ধুধু মাঠ পেড়িয়ে
হলুদ সরিষা ফুলের গন্ধে আমরা একটু থমকে দাঁড়াই,
তারপর অসংখ্য বিল আর নদীর জলে সাঁতারে সাঁতরে মানুষের জংঙ্গলে এসে থামি।

শাহেদ এবার বলে,
‘ মন খারাপ হলে মানুষের ভিড়ে দাঁড়াবি।
জানিস,
অসীম ধুধু মাঠে মানুষের মনও ধুধু হয়ে যায়!
মন ধুধু হলে সময়ও থমকে যায় বুকে পাথরের মতো।
তারচেয়ে বরং মানুষ দেখি’।

আমি তখন এক এক করে মানুষের চেহারা দেখতে থাকি,
আমার তীব্র মন খারাপ হয়ে যায় আবারো,
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে মানুষের সব চেহারা ।
আমি শাহেদকে বলি,
‘মানুষের জঙ্গলে কোনো মানুষ নেই বন্ধু,
সবই মুখোশ।
শাহেদ বাতাস থেকে এক আয়না বের করে আমার চোখ বরাবর ধরে বলে,
‘দেখতো,
এই আয়নায় কোন মানুষ দেখা যায় কিনা?
আমি চিৎকার করে বলে উঠি,
‘এই আয়নায় আমি খুন হয়ে যাবো বন্ধু,
এখানেও কোন মানুষের চেহারা নেই!,
শুধু একটি মুখোশ বিদ্রুপের হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে’।

আমি শাহেদের হাত এক ঝাপটায় আলগা করে দৌড়ে পালাই সেই মানুষের জঙ্গলে,
শাহেদ আমাকে খুঁজতেই থাকে,
আমি ঘেমে ক্লান্ত হয়ে মুখে জল দিয়ে মুখোশ মুছে ফেলি,
মুছে যায় আমার নাম পরিচয় আর চেহারা।
শাহেদও আমাকে দেখে আর চিনতেই পারে না!
পরিচিত কেউই এখন আমাকে চিনতে পারেনা,
এমনকি স্থির স্বচ্ছ জলে নিজের চেহারাও অপরিচিত মনে হয়।

সেই স্বচ্ছ জলে তাকালেই দেখি  
একজন মানুষ শুধু  একজোড়া ক্লান্ত চোখে
তীব্র মায়া নিয়ে পলকহীন তাকিয়ে থাকে আমার চোখে।

প্রতিদিন স্বপ্নের একই জায়গায় ঘুম ভেঙে যায় আমার!
আমার পুরো শরীর ঘরের শীতল বাতাসেও ঘেমে থাকে সেই সময়।

ঘুম ভাঙলেই
সব হাওয়ায় মিলেয়ে যায় মুহূতে‌ই
এমন কি বন্ধু শাহেদের চেহারাও।

স্বপ্নের সব মিথ্যা মনে হয়!
শুধু ,
শুধু ক্লান্ত চোখে তীব্র মায়া নিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে থাকা
আয়নার সেই মানুষটিকে একমাত্র সত্যি মনে হয়।
————-
র শি দ  হা রু ন
১৭/০৮/২০২৩