মন চলে যায় সেই গাঁয়ে
বড় সড়কের ঠিক বাঁয়ে ।
ধুলোভরা বাঁকা সরু পথ;
দুই ধারে শিরিষ-অশথ ।
বাদশাহী দীঘি কিছু পরে,
কালো জল টলটল করে ।
উঁচু পাড়ে তাল গাছগুলি ;
নীলাকাশে মাথা রাখে তুলি’ ।
ঘাড়বাঁকা রাজহাঁস সব--
‘প্যাঁক্ প্যাঁক্’ খুব কলরব ।
লাল সাদা শালুকের দল
শান্ত ধীর স্থির অচপল ।
কালীতলা আটচালা ঘর--
পাকা মেঝে, খুবই সুন্দর ।
বসে গেছে পাঠশালা ওই,
সুরে পড়ি নামতার বই ।
মকশো-য় শ্লেট মুছি ভরি;
কান ধরে উঠ্-বোস্ করি ।
হল ছুটি ? হৈ হৈ চিৎকার ;
চুপ্, ওই যায় হেডস্যার ।
ঝুপ্ ঝাপ্ সাঁতারের ধুম ;
চান করে ভাত খেয়ে ঘুম ।
আয় সব, লুকোচুরি খেলি--
ওরে তোরা কোথা সব গেলি ?
খেলি যবে চু-চু কিত্ কিত্;
গুনি শুধু, কার হল জিত ।
টেরে টেরে দেখি অবিরত
মারবেল কার আছে কত ।
পেয়ারার মগডালে চড়ি
নীচে রেখে বই শ্লেট খড়ি ।
টোপা কুল কষে কাটি দাঁতে
নুন কিছু নিয়ে বাম হাতে ।
সাঁঝে পড়া হ্যারিকেন জ্বেলে ;
কষি আঁক, ঘুম আসে ঠেলে ।
ঠাকুমার কোলে শুই রাতে--
গল্প শুনি আদরের সাথে ।
জলে ভাসে কাগজের ডিঙি;
মাঝ বিলে ঘাই মারে সিঙি ।
গোল ফুল কদমের ডালে ;
কালো মেঘ সারাদিন ঢালে ।
তাল বড়া ভাজে ছোটখুড়ি,
খাবো খুব গুনে এককুড়ি ।
ফুটেছে কি শিউলির কুঁড়ি ?
হল গড়া গণেশের ভুঁড়ি ?
ছেয়েছে কি কাশফুল চরে ?
পূজো এল, ন্যাতা দাও ঘরে ।
বাজে ঢ্যাম্ কুড়্ কুড়্ ঢ্যাম্ --
ঢাকে তোলে বোল রাধেশ্যাম ।
শীতকালে গ্রামপূজো, যাত্রা ;
সীতা সাজে লক্ষণ সাঁতরা ।
দেরি কেন--ফটাফট্ জ্বালো
খান তিন হ্যাজাকের আলো ।
চুপ্ চুপ্ --ওই বুঝি হয় শুরু;
করে বুক ধক্ ধক্, দুরুদুরু ।
ঘন ঘন চোখ মোছে পিসী ;
যাত্রাশেষে শেষ হয় নিশি ।
ভোরে খাই খেজুরের রস--
ঠিক যেন অমৃতপরশ ।
সাঁঝ হল, ভিজে চাল বাটো ;
পিঠে হবে, নারকেল কাটো ।
মিহি করে বাটো বিরিডাল--
ভোরে উঠে বড়ি হবে কাল ।
কাকা কয়--কাল হবে ফিস্টি;
তোল্ চাঁদা, বানা দিনি লিস্টি ।
শহরের কোলাহল নাই,
মনে করে তারে শান্তি পাই ।
মনে ভাসে আরো কত কথা;
ফিরে যেতে, হয় ব্যাকুলতা ।
পাবোনা গো সেদিনের ছবি--
জানি, একই নাই সবই ।
ওগো সেই চিরচেনা গ্রাম--
দুর হতে জানাই প্রণাম ।