প্রথমে যেদিন মেলেছিনু আঁখি সূতিকার ঘরে--
জেনেছিনু অনুভবে, কে দাঁড়ায়ে অলখে শির 'পরে ।
জনমে জনমে তুমি হে মম অতি পরিচিত তনু ;
আবার অনাবিল আনন্দে গড়িলে মম দৈহিক অণু ।
তখনও চিনিতে শিখি নাই--মাতা পিতা বসুমতী ;
চিনেছিনু তোমারেই শুধু--চির সৃষ্টিতে যিনি দেন অনুমতি ।
ওষ্ঠে মম ছিল যে ভাষা--নহে তাহা মম জননীর ;
কত আনন্দ লভেছে সকল পরিজন সে অজানা ধ্বনির ।
সে ভাষা তোমারি ভাষা--বুঝিতাম তুমি আর আমি ;
সে ভাষাতেই দিয়েছিনু বুঝি এ জীবনের প্রথম প্রণামী ।
যেদিন হইতে ফুটিয়া উঠিল ওষ্ঠে নব জননীর ভাষা--
বুঝেছিনু, হারালেম তব সনে ইহ জীবনের সিধা সাক্ষাত-আশা ।
সেদিনই হইল শুরু এই জীবনের যত জটিলতাগুলি ;
ভুলিলাম--মোরে আঁকিবার কালে কে হাতে ধরিয়াছিল তুলি ।
পাইলাম যত, দীনহীন নির্লজ্জের মত চাইলাম আরো ;
তুমি দিয়েছ অনেক--হস্তে তুলিয়া, তারি যতগুলি পারো ।
এত দিলে, এত দিলে--বুঝি ঝুলিটি তব উজাড় করিয়া ;
সকলের মত তবু, চেয়ে গেনু এ জীবনের অমূল্য প্রহর ধরিয়া ।
কত যে চাহিবার আছে--না জানি তাহার সীমা পরিসীমা ;
সকল আঁধার পুরালে আপন আলোতে, তুমি প্রভাতের অরুণিমা ।
জানি, আবার আসিছে ফিরিয়া মিলনের সেই মধুরাতি ;
হে মম চিরসাথী, বুজাইতে হবে ক্ষণিকের এই বাসর-বাতি ।
এতদিনে যত যাহা কিছু করেছিনু এ জীবনের সঞ্চয়--
সকলি তো ফিরাইতে হবে, বন্ধন শুধু রহিবে চির অক্ষয় ।
শ্রান্ত ক্লান্ত দেহে চাহিয়া আছি তব স্নিগ্ধ আনন পানে--
কি শান্তি কি শান্তি, সকলই ত্যাজিতে তব উদাত্ত আহ্বানে !
সেই যদি ফিরাইতে হবে--কেন তবে করিয়া রাখিলে ঋণী ?
কেন এ দেবার খেলা নেবার কালে মূঢ়সম মোটেও ভাবিনি !
একটি জনমে, প্রভু--শুধু একটি জনমে দিও না হে কিছু ;
বুঝিতে পারিব তবে--সে কোন রতন আছে এ মহাঋণের পিছু ।