--- প্রলয়ের গান--
গোপাল কৃষ্ণ পাল
আজি জাগিয়াছি আমি--
জাগিয়াছে মম আঁখি l
আর চলিবে না ফাঁকি
মোরে রাখিয়া অন্ধকারে;
হিসাব লইবারে
শুনিয়াছি অন্তরে ডাক l
বিমূঢ় হতবাক
দেহে সহিনু যাতনা,
রুধির মম কত না
মৃত্বিকারে করিয়াছে লাল l
এই চক্রব্যূহজাল
ভেদিব ভীষণ বাহুবলে;
আজি আপন কর্ম ফলে
মরিবে সকল শক্তিমান l
বাজে প্রলয়ের গান--
ওই শোনো দখিনা বাতাসে l
কেন রে দীর্ঘশ্বাসে
কাটায়েছি কাল,
কেন চিরি নাই ফাল ফাল
প্রসারিত দানব-বক্ষ ?
কেবলি একটি লক্ষ্য
জাগিল বক্ষের গহনে--
ধ্বংসের খাণ্ডব দহনে
যবে জ্বলিবে অগ্নিশিখা,
পরিবে ভালে জয়টিকা
এই অনাদৃত মুক্তিকামী !
তাই জাগিয়াছি আমি l
আজি নাহি ক্ষমা তার--
সেই বিধাতার
যে মোরে করিয়াছে সৃষ্টি l
এ আঁখির জ্বলন্ত দৃষ্টি
করিবে তাহারে ছারখার !
ভাঙিয়া চুরমার
করিব রত্ন-আসন খানি;
ধুলা তে ফেলিব টানি'
তাঁর অঙ্গের বাস l
কত বিদ্রুপ উপহাস
জড়াইল জীবনে;
ঘুরিয়াছি আনমনে
পাগলের প্রায়--
সে কি যাতনা হায়
সব দিবা-রাতি !
নাহি কেহ সাথী,
শূন্য জগত ধু-ধু --
একা আমি শুধু
কুটিয়াছি মাথা কঠিন পাষাণে l
বিধাতা, তব মূর্তির ভাসানে
আজি হইব অগ্রগামী l
তাই জাগিয়াছি আমি l
একদা মরীচিকা সম
তুমি বঁধু মম
ডাকিলে নিকটে--
আজি হৃদয়-তটে
শুদু ধু-ধু বালি l
কেন করিলে খালি
নিঃশ্বাস-বায়ু ?
এমন পঙ্গু পরমায়ু--
কিবা তারি দাম ?
জপিয়াছি তব নাম,
যুগযুগান্তর ধরি'--,
ভেবেছিনু দিবে ভরি'
শূন্য হৃদয়-পাত্রে l
দিলে না পরশ গাত্রে--
অশ্রু জলে ভাসিয়াছি যবে l
কেমনে ভুলিব তবে
সে কষ্টের জ্বালা--
মম স্বপনের মালা
ছিঁড়িয়া ছুঁড়িলে দূরে l
তোমারে ঘিরিয়া বাজিত সুরে
মম হৃদয়-বাঁশি !
কত না অট্টহাসি
হানিত শেল বক্ষে;
আজি দেখ মম চক্ষে
ঝরে গো অনল ধারা l
তব হস্ত-রচিত পাষাণ-কারা
এবার ভাঙিয়া, লুটাইব ধুলায়--
তবে মম বক্ষের কুলায়
যদি আসো হে নামি !
তাই জাগিয়াছি আমি l
তাই জাগিয়াছি আমি l