কাশ্মীর হতে সুদক্ষিণে কন্যাকুমারী
কে তুমি যুবা, সৌম্যকান্তি গেরুয়াধারী
ভ্রমিলে একা, রাত্রি দিবা একাত্ম করি’
নগ্নপদব্রজে--বক্ষে কিবা স্বপ্ন ধরি’ ?
অসংখ্য গ্রাম হতে গ্রামান্তরে, শহরে,
ভরা লোকালয় হতে শূণ্য মরু’পরে ।
দৃঢ় উন্নত ললাট; স্থির লক্ষ্য পথে
পথপার্শ্ব হতে সুন্দর রাজকক্ষতে
অবিশ্রাম গতি ভারতবর্ষ দর্শনে;
থামোনি তো, প্রবল জাড় বা বর্ষনে ।
চিনিলে দেশজননীর নাড়ি-ধমনী;
কত নানা ভাষা, বেশভূষা আবরনী !
নানা ধর্ম-আচার-সংস্কার-কুসংস্কার-
অশিক্ষা-দারিদ্র-লালসা-অবিচার-
অপুষ্টি-লাঞ্ছনা-ঘৃণা-জাতিধর্মভেদ;
একত্রে মহানতা ও অন্তর্বাহী ক্লেদ !
দেখেছো শোষণ শাসন ধর্মের নামে,
নাই দাম নীচু জাতির কর্ম ও ঘামে ।

চক্ষে তোমার বহেছে ধারা অবিরত
"কি করিয়া হবে এ দেশ চিরউন্নত !"
ঋদ্ধ হলে নব অর্জিত অভিজ্ঞতায়--
স্কন্ধের শূণ্য ঝোলা পূর্ণ হয়েছে তায়।
সুপ্রাচীন বিপুলা ভারতের বৈচিত্র্য
এক দৃঢ় সুত্রে বাঁধা, নহে খণ্ডচিত্র ।

ক্ষুব্ধ সমুদ্র দিগন্তপ্রসারী প্রচণ্ড--
জাগে ওই দেশের অন্তিম শিলাখণ্ড ।
ভয়হীন সন্তরণে, জলদলপতি
হার মানি’ বীরপদে জানালো প্রণতি ।
সূউচ্চ গিরিশিখর হতে জ্ঞানধারা
সাগরে মিশে হল আনন্দে আত্মহারা ।
ভুলিলে আপনার দৈহিক ক্ষুধা তৃষা;
সংকল্প অটল--"নবীন ভারত-দিশা ।"
আলোকিত হলে যে সমুজ্জ্বলপ্রভায়--
দিকে দিকে ব্যাপ্ত হল তা মানবতায় ।
"মূর্খ, চণ্ডাল ভারতবাসী সব ভাই"
এ দৃপ্ত বাণী ভারত আগে শোনে নাই ।
"আগে অন্নের ব্যবস্থা, তারপর ধর্ম ।"
এ বাণীই গড়েছে মানবতার হর্ম্য ।
"ওঠো, জাগো, আর ঘুমিওনা; লক্ষ্যে যাও।"
কি উদাত্ত আহ্বান ! শুনেছি মোরা তা-ও ।
তরঙ্গগর্জনসম বিশ্বে দিলে ডাক--
“জীবে কর প্রেম; আর সব দুরে থাক ।”
দেবসেবার সে হোক শ্রেষ্ঠ পরিচয়;
তবেই হবে মনুষ্যবিবেকের জয় ।
হে ক্ষণআয়ু সন্নাসী পুত্র ভারতের—
আজও তুমি আছো প্রেরণা আমাদের ।
আজও তুমি আছো প্রেরণা আমাদের ।