--মনুষ্যত্বের মরণ--
সৃষ্টির কোন আদিপর্বে
বিধাতা করিলেন যবে
মানবেরে সৃষ্টি--
ছিল কি তাঁহার
চক্ষে অথবা লক্ষ্যে
সময়ের দূরদৃষ্টি ?
মানবেরে গড়িবার কালে
ভরিয়া দিলেন প্রসারিত হস্তে
শ্রেষ্ঠ সকলি, ছিল যাহা সঞ্চয় ;
কিবা প্রতিদান বিধাতা আজি পান
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির দ্বারে দ্বারে --
তবে কি সে দান নহে অপচয় ?
আজি এ কোন আঁধার কূপে
ফেলিয়া দিয়া মানব-প্রজাতি
আপনারে করিবে বিসর্জন !
দিকে দিকে তাই মহানন্দে
বাজায়ে ভীষণ ভেরি
করিতেছে তা'রি আয়োজন l
খুঁড়িতেছে যে কবরখানা
দুনিয়ার প্রতি কোণে কোণে--
তা-য় কাহারে দিবে গো চাপা ?
আপনারই প্রজাতির মশালবাহী
আপন সন্তান কিম্বা পরের ?
হায়, সৃষ্টির এরা কোন খ্যাপা !
কিবা ভেদাভেদ মানবে পশুতে--
যবে মহানন্দে করিতেছে স্নান
মানব, মানবেরই রুধির-স্রোতে ?
তবে সে কিসের অধিকারে
শ্রেষ্ঠ ঘোষিয়া আপনারে
উড়ায় কেতন ধরিত্রীর রথে ?
যে দেহটি লুটায়ে ধূলিতে
শ্বাস-সমাপ্তির ক্রন্দনে ক্রন্দনে
করিতেছে কাতর প্রার্থনা --
বাঁচিবার অধিকার দিয়া, তাহারে
দিয়াছে মুক্তি গর্ভের বাহিরে
তাহারি প্রজাতির অপরজনা !
ওরে ও মানবসন্তান,
এ ধরাতে আসিবার কালে
মুখে তোর ছিল কত হাসি--,
হেরিয়া তাহা জননীটি তোর,
হেথা সেথা আরও কতজন
মধুর আনন্দে যাইত ভাসি' l
আজি হাসিয়া যাসরে একা
দর্পে দম্ভে প্রবল অহংকারে
আপন অঙ্কিত ক্ষুদ্র গণ্ডি মাঝে l
কিবা পেলি, কিবা দিলি
আপন জীবনের পথ অভিযানে--
সে হিসাব লাগে কি তোর কাজে ?
তব চক্ষের সব লজ্জা
ডুবাইলি কোন অতল তলে--
আজি নাহিরে, তাহা নাহি l
মানবে গড়া মানবের গুন
কাঁদিয়া মরিছে চরণতলায়
হতাশায় তব পানে চাহি’ l
যে প্রজন্ম আসিয়া পৌঁছিবে
কালি তোমাদেরি দরবারে--
কি তাহারে দিবে গো তুলিয়া ?
কোন সঞ্চিত গোপন ধনরাশি--
তব জীবনের গোধূলি প্রান্তে
তাহাদেরি সম্মুখে যাইবে খুলিয়া ?
ওরে ও মূঢ় মানবসন্তান,
করিবি তুই যাহারে সৃষ্টি
আপন রক্ত ভাঙিয়া-চুরিয়া,
তাহার কঠিন চাহনি-প্রশ্নবাণে
তব সজ্জিত জীবন-পাত্র
উঠিবে না কি লজ্জাতে পুরিয়া ?
বহিছে ভুবনে যে বিষাক্ত বায়ু,
নহে সে তো কোন বাসুকিনাগের--,
সে যে তব আপনারই শ্বাস !
অগ্নিকণা রূপে উড়িয়া উড়িয়া
ধীরে ধীরে সে পশি' সব প্রাণে--
বিজয়দর্পে করিবে তা'রে গ্রাস l
আমি মানবের মাঝে
গেয়ে যাই এই গান --
“ওরে শোন তোরা শোন,
আমিও তো মানবসন্তান--
আমা' হতে সুন্দর পৃথিবীরে
কেন রে লইবি কাড়িয়া ?
থাম তোরা থাম, কহিনু সম্মুখে
মম হাঁটু দু'টি গাড়িয়া l "