কি জানি আজ কেন তোকে পড়তেছে খুব মনে ;
এতদিন তুই কেমন করে আছিস ভুলে বুকের ধনে--
                                ও মা, বল না মোরে কোথায় আছিস তুই ?
বললে দিদি, পরীর দেশে গেছিস ডানা দুটি মেলি ;
বিশ্বাস হয়নি--ধুৎ, ডানা তুই কেমন করে পেলি ?  
                                জানিস মা, সেই গাছটায় ফুটছে কত জুঁই !
এই তো সেদিন এমনই এক জোছনাভরা রাতে
আমায় কোলে নিয়ে বসেছিলি পূবের বারান্দাতে ;
                                বলে গেলি গল্প কত--একের পরে আরেক ।                      
রাক্ষস, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, রাজপুত্তুর, রাজকন্যে ।
রাণীর দুঃখে কেঁদেই ফেলি--কি জানি কি জন্যে ।
                                 সব কি ছাই বুঝতুম, বুঝতুম তো আধেক ।
হঠাৎ তখন পড়ল চোখ ছাতের ছায়ার ’পরে--
ফোকলা দাঁতে শাঁকচুন্নী দাঁড়িয়ে পাঁচিল ধরে !
                                 জড়িয়ে তোকে ভয়ে, মুখ লুকোলেম কোলে ।
তুমি তখন হেসে, বললে চুমু খেয়ে--দুর বোকা !
অমনি খোঁপা থেকে পড়লো বেলা ফুলের থোকা--
                                 গন্ধটি তার পাগল বাতাস নিয়েই গেল চলে ।
চকচকে তোর নাকছাবিটি দিচ্ছে ঝিলিক চোখে ;
ওঃ কি বলবো--কি ভালো যে লাগছিল মা তোকে !
                                  তুই যেন মা বর্ষাভেজা চাঁপার ডালের কুঁড়ি ।
একমনে তুই গল্প বলায় খুব উঠেছিস মেতে ;
শেয়ালখানা উঠল ডেকে দুরে আখের ক্ষেতে ।
                                  একমনেতে চরকা কাটে চাঁদের দেশের বুড়ি ।
আয়, আয়, আয় না মাগো--একবারটি তুই ফিরে ;
চাঁদমামা আজ হাসছে খুবই এই পূর্ণিমারাত ঘিরে ।
                                   খোকা তোর হয়েছে বড়--ছোট্ট কিন্তু মনে ।
এক ছুটেতে আনবো পেড়ে কদম গাছের ফুল ;
তোর খোঁপাতে গুঁজতে গিয়ে ভাঙবে মনের ভুল--
                                   মা-টি আমার কোথায় ? খুঁজবো তারার সনে ।