পেয়েছে ছুটি শ্রাবণধারা,
নদীতে স্রোত বাঁধনহারা ।
কালো বাদল পড়েছে বাঁধা ;
কাশের মাথা হতেছে সাদা ।
আকাশে অলস মেঘের দল
বড়ই সুবোধ, বড়ই অচঞ্চল ।
রাতের শেষে পড়বে ঝরে
শেফালি এবার ঘাসের ’পরে।
বিন্দু বিন্দু শিশির কণা
দেখার তরে দিন গোনা ।
পারিস যত তাড়াতাড়ি
গাছকোমরে পর শাড়ি ।
মায়ের চোখে দিয়ে ফাঁকি
চল্ রে দু’জন ছুটতে থাকি ।
দেখবো অবাক চক্ষু ভরে
কি আছে দশ গাঁয়ের পরে ।
কাশের বনে পথ হারাবো,
লাফিয়ে কাদা জল পারাবো ।
নবাবগঞ্জের সড়ক পারে
কাঁটায় বনে আলের ধারে
ধরবি ঝুরি পড়বি ঝুলে,
ভরবি কোঁচড় শালুক ফুলে ।
বেত বৈঁচির ফল খেয়ে
গুনগুনিয়ে উঠবি গেয়ে ।
অচিন গাঁয়ে চিনবে নাকো,
শুধাবে, "কোন গাঁয়েতে থাকো ?"
বলবো হেঁকে--নিশ্চিন্দিপুর ।
"ওরেব্বাবা, অনেক সে তো দুর!"
গাঁয়ের পরে গাঁ--বিস্ময়ে সব দেখা ;
কত কত গাঁয়ের নাম হবে যে শেখা !
লজ্জাবতী দেখিয়ে দিয়ে
বলবি--বল্ তো দেখি কি এ ।
বিপদে আমায় ঠেলে হেন
বলবি--পাঠশালাতে যাস্ কেন ?
দু’চারখানি ভাঙবি আখ,
বলবি--একখানা তুই চাখ্ ।
"কার বাগানের কে জানে !”
কইবি হেসে আমার কানে ।
যদি কষ্ট পেয়ে আস্তে হাঁটি,
বলবি--হাবা তুই, মারবো চাঁটি ।
ফেরার সময় নামলে রাত
শক্ত মুঠোয় ধরবি হাত ।
মায়ের কাছে মিথ্যে ঝুড়ি ঝুড়ি
বলবি, যেন আদ্যিকালের বুড়ি ।
এখন আমি আর ছোট নেই--
বড় অনেক হয়েছি রে ;
তুই কিন্তু একই আছিস্,
বড় মোটেই হোস্ নি রে ।
তুই মানবী, মাটি দিয়ে গড়া--
মাটিও তোকে খুব চেনে ;
সেই মাটি তাই আদর করে
আপন কোলে নিয়েছে টেনে ।
জানিস্ দিদি , তুই পাশে নাই--
লাগে তাই ভীষণ একা রে ;
চিনেছি যা দেখেছি যা তোর সাথে--
তেমনটি আর হয় না দেখা রে ।
ও আমার দুগগা দিদি, দিদি রে--
আমায় ছোট্ট করে দে না ;
আর যা যা চেনার বাকি আছে--
তোর সাথে হোক এবার চেনা ।
নয়ন আমার পদ্ম-পাতা--
টপ্ করে জল পড়ছে খসে ;
আজ শরতের আবির্ভাবে
তুই দুগগা-ই আড়ালে বসে !
তুই তো আমায় শিখিয়েছিলি--
মিষ্টি কেমন কলকে ফুলের মধু ;
সেই যদি তোর যাওয়ারই ছিল--
কেনই বা তা শিখিয়ে গেলি শুধু শুধু ?