নিশ্চিন্ত অন্ধকারের গহ্বর হতে
আমায় প্রথম যেদিন দেখালি মা আলো--
সেদিনই প্রথম পেয়েছিলি টের,
ন’টি মাসের সঞ্চিত সুখ জীবন যে হারালো ।
আপন স্বপ্ন-সুতোয় নক্সী-কাঁথা
বুনছিলি মা ছোট্ট প্রাণের সাড়াটি পেয়ে ;
তোর শরীরের রক্তধারার স্বাদে
গেল কোষগুলি মোর গুণিতকে ছেয়ে ।
অঙ্গসকল সাজিয়ে দিয়ে দেহে
মূর্তি আমার গড়ে গেলি প্রহর গণে গণে ।
আমায় পূর্ণ করার কঠিন ব্রত--
পূণ্যফলের বহিঃপ্রকাশ মানলি মনে মনে ।
তবু রাখতে কোথায় পারলি মাগো
সিন্দুকে তোর আগলে রাখা গোপন মণি ;
সময়ের ভীষণ দাবি ভাঙলো তারে--
দুই প্রাণেতে থাকবে কেমন একই বন্ধনী ?
বিচ্ছেদের সেই তীব্র আর্তনাদ--
কি প্রাণান্ত, কি কঠোর নিয়মের বাস্তবতা !
প্রাণ হতে প্রাণ ছেঁড়ার পালা-য়
লুকিয়ে থাকে গতিমান জীবনধারার পূর্ণতা ।
তোর একটি দিনের ভীষণ যন্ত্রণা সে
এখন সঞ্চারি’ যায় মোর প্রাণমনের তন্ত্রে ;
বুকের মাঝে শূণ্যতা আর হাহাকার--
যবনিকা যাচ্ছে পড়ে "মা" ধ্বনিটির মন্ত্রে ।
এতদিনে মা পাচ্ছি প্রবল টের
ছিন্ন নাড়ির ব্যথাটি, স্বাধীন নাভির মূলে ।
বল জননী মোর, কেমনে এবার
দেব তোকে না-ফেরা পাড়ির ডিঙায় তুলে ?
যে বেদনা পাচ্ছি মাগো এখন--
মোটেই সে নয় কম, তোর প্রসববেদনার চেয়ে ;
তোর ছিল সে একটিই দিন মা,
জীবন আমার হায় চিরবেদনায় যায় ছেয়ে ।
বুঝি সব জনমেই সইতে হবে
চক্রাকারে এ, কিছুদিন আগে কিম্বা পরে ;
মাঝে শুধুই স্নেহসুখের বন্ধনে
কাটবে কিছুকাল এই ধরণীর নাট্যঘরে ।