সুরেন চন্দ্র তিপ্পান্ন বছর পর
গতকাল এসেছে কলকাতা থেকে
আমায় দেখে খুশীতে ডগমগ
সুরেন এই গ্রামেরই সন্তান
আমার বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী
নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি ওর সাথে
নিরাপত্তার অভাবে গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় যেতে হয় ওকে।

প্রশ্ন করি তাকে
আমি এখন কিছুটা স্মৃতিভ্রম মানুষ
মনে থাকেনা কিছুই,
সুরেন তোর কি কিছুই মনে নেই ?

সুরেন শুরু করে -
সব মনে আছে, কিছুটা এখন শোন।
যদিও কোলকাতায় কেটেছে জীবন
কৈশর ও শৈশবের জন্য এখনও কাঁদে মন।

আষাঢ় শ্রাবণে আউশ ধানের গন্ধ  
পাটগাছ থেকে আঁশ ছাড়ানোর দৃশ্য
অগ্রহায়নের সন্ধায় হারিকেন জালিয়ে
পরীক্ষার্থীদের পড়ার কলরব
সব গেছে হারিয়ে।  
মর্মে এখনও একটু একটু শুনি
সন্ধ্যায় খড়ম পায়ে হাটার পদধ্বনি।

পৌষ মাঘে বৌঁচি গোল্লাছুট কানামাছি
দাড়িয়াবান্ধা আরো কত খেলা খেলেছি
সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি
রাতে ছিলো শেয়ালের ডাকাডাকি।

অগ্রহায়নে প্রাক সন্ধ্যায় দেখতাম
আমনের আঁটি বোঝাই নৌকা সারি সারি
পাঁকাধানের মৌমৌ গন্ধ বাড়ি বাড়ি
ধান মাড়াই হতো দিয়ে হাতের বারি,
চলতো মধ্যরাত পর্যন্ত পরণকথা ও পাঁচালী।

সকালে খেজুর রস ও ঝোঁলাগুড় মুড়ি
কোথায় হারিয়ে গেলো, এখন সবই স্মৃতি।

এখন সবাই আধুনিক যুগের অভিনেতা
মানুষের নেই সেই নৈতিকতা
তলানিতে গেছে অধিকাংশ মানবিকতা
বেড়ে গেছে নিষ্ঠুরতা বর্বরতা।

ঈশ্বর নাকি সবই পারেন,
আমি অনেকবার অনুনয় করে বলেছি-
ঈশ্বর তুমি আমার শৈশবটা একবার ফিরিয়ে দাও,
কিন্তু আমি শৈশব-কৈশোর ফিরে পাইনি।
আমি জানি প্রভু সবই পারেন
পারেন না শুধু কারো জীবন পিছিয়ে নিতে ।

সুরেন এবার থামলো -
আমি সুরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম
ওর কত ভালো স্মৃতিশক্তি
আর আমারটা কত কম !
০২-০১-২০২১
.