অয়ি মম পুত্র ! তুমি আমার আশির্বাদ নিও,
আমার দাদুভাইদেরকে দিও আমার আদর ও স্নেহ।
তোমার এই বিত্তহীন জন্মদাতা পিতা আমি,
তোমার অনেক চাহিদা পূর্ণ করতে পারিনি।
কিন্তু তুমিতো বিত্তবান, তাই
দাদুভাইদের কোনো আব্দার অপূর্ণ রেখোনা।
প্রিয় পুত্র ! এটা ভেবোনা যে, তুমি না আসলে
আমি তোমায় ভুলে যাব, কিংবা কম আশির্বাদ করবো ।
জীবন সায়াহ্নে এসে বারবার অনুশোচনা হচ্ছে,
মনে হচ্ছে, কোথায় যেন আমি ভুল করেছি।
ভেবোনা, তোমার কাছে আমি কৈফিয়ত চাচ্ছি,
তোমার কাছে হয়তো এটাই আমার শেষ চিঠি।
তাই বলে তাড়াতাড়ি মরে যাচ্ছি না,
চাইলেই তো আর মৃত্যু আমাকে ধরা দেবে না !
কিন্তু মস্তিষ্ক যেভাবে আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছে
লিখতে বসলে চোখ যেভাবে ঝাপসা হয়ে আসে,
আর হাত যেভাবে কাঁপতে শুরু করে,
তাতে আর লিখতে পারবো বলে মনে হয়না।
আগামী বার আমাকে যদি দেখতে আসো,
তবে আমার দাদুভাইদের সাথে নিয়ে এসো।
আমি দেখতে চেয়েছি শুনলে ওরা আসতে চাইবে।
এটাই শেষবার, বাবা।
বউমাকে এতদূর আনার দরকার নেই।
মা-মনীর এতো গরম সহ্য হবে না।
আসার সময় বাসা থেকে কিছু রেঁধে এনো-না।
এই বৃদ্ধাশ্রমের খাবারগুলো খারাপ নয়,
বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে সমাজে খারাপ ধারনা থাকলেও,
আমি এর সাথে একমত নই,
বৃদ্ধাশ্রম তেমন খারাপ যায়গা নয়।
অনেক কথাই লেখার আছে কিন্তু সব লিখবোনা।
তুমিতো অবগত আছো, তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে
তোমার মায়ের আর জ্ঞান ফিরে আসেনি,
এবং তোমার জন্মের মাত্র তিন দিন পর,
ডাক্তারের সমস্ত চেষ্টাকে উপহাস করে,
ইহলোক ছেড়ে সে পরপারে চলে যায়।
সে আর ফিরে আসেনি।
আত্মীয়-স্বজন আবারো বিয়ে করার জন্য
আমাকে বার-বার পরামর্শ ও তাগাদা দিলো,
তোমার কথা ভেবে আমি তা করিনি।
আমি আমার জান-প্রান সর্বস্ব উজার করে
কোলে-পিঠে নিয়ে তোমাকে মানুষ করেছি,
তিরিশ বছর কেটে গেলো।
এই কয়েকদিন হল তোমার মা আমায়
ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে এই বৃদ্ধাশ্রমে,
তাকে হারানোর তিরিশ বছর পর
স্বপ্নে সে বারবার আমায় ডাকছে, আর
বলছে- চলে এসো, তুমি চলে এসো ।
তাই মনে হয়, এখন আমার যাবার সময় এসেছে ।
কাফনের জন্য তোমাকে খরচ করতে হবেনা,
সাদা মার্কিন কাপড় আমি আনিয়ে রেখেছি;
আমি মারা যাবার পর, আমার বাবা-মায়ের পাশে
শায়িত, তোমার মায়ের পাশে আমাকে কবর দিও।
এতে কিছুটা যায়গা নষ্ট হবে ঠিক,
তবুও আমার এ আব্দারটুকু রেখো, রাখবে তো বাবা ?