ভালো আছো শ্রী ! ভালো আছো !!
মনে পরে , সেই কলেজের নবীন বরণের কথা , সেইদিন তোমার সাথে প্রথম চোখে চোখ রাখা - যেন কোনো হেমন্তের শীতল স্রোত বয়ে গিয়েছিলো আমার রুক্ষ হৃদয়ে - বৈশাখের দাব-দাহে শুকিয়ে যাওয়া মাটির রুক্ষতার উপর যেন একফোঁটা বৃষ্টির স্বস্তি । কি শান্তি!  কি প্রশান্তি !
সেদিন আমি অপলক দৃষ্টিতে তোমাকেই দেখেছিলাম - তোমার উম্মত খোলা কবরী যেন শরতের আকাশের  পেজা তুলোর মতো স্বেত শুভ্র মেঘের বিচরণ - চক্রাকারে নেমে এসেছে তোমার খোলা পিঠের গা বেয়ে - ছুঁয়েছে তোমার নিতম্ব ।
কিছুটা কেশের বৃন্ত তোমার মুখমন্ডলকে যেন লুকিয়ে রেখে স্পর্শ করেছে তোমার রক্তিম ওষ্ঠ, সেই ঠোঁটের  বিভিন্ন সরলরেখার ভাঁজ যেন এক রহস্যময় সুদীর্ঘ বিচিত্র পথ- যে পথের  আকর্ষণে কোনো পথিক খুঁজে ফেরে তার যৌবনের পূর্ণতা,
মনে পরে - তোমার সেই গালে টোল পড়া, গজ- দন্তের ফাঁকে মিষ্টি এক চিলতে হাসি, যেন পৌষের শীতের অলস দুপুরে রৌদ্রের লুকোচুরি খেলা।
আমি শুধু চেয়েছিলাম একবার, তোমাকে ছুতে - যে ছোয়ায় ছিল না কোনো অপরাধ বোধ । তোমার শরীরের চড়াই - উৎরাই, আঁকা - বাঁকা প্রতিটি খাঁজে আমি চেয়েছিলাম তোমাকে না পাওয়ার বেদনার কান্না লুকোতে , সেই কান্নার প্রতিটি বিন্দু দিয়ে লেখা হতো আমাদের নুতন প্রেমের মর্ম  গাঁথা , চেয়েছিলাম তোমার শরীরের মহুয়ার সুগন্ধে মাতাল হয়ে ভেসে যেতে নিস্তরঙ্গ নদীর মতো - হারিয়ে যেতে মোহনায়, চেয়েছিলাম তোমার সুগভীর নাভির মধ্যে হারিয়ে যেতে -খুঁজে পেতে অতলস্পর্শ আটলান্টিকের মহাসমুদ্রে শীতল রহস্যময় অন্তহীন স্রোতে নিজের অস্তিত্ব ।
মনে পরে শ্রী !!
হয়তো  তুমিও বুঝতে , হয়তো  চাইতেও  , কিন্তু জটিল কণ্টকাকীর্ণ পৃথিবীতে - তা হয়তো স্বপ্ন হয়েই রয়ে গেছে। হয়তো বা নিখাদ ভালোবাসায় বলা হয়ে ওঠে না ! স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন হয়েই থেকে যায় ।
আমি কখনোই হতে পারিনি  মেধাবী ,পারিনি কখনো ভালো প্রেমিক হতে ,
আমি পারিনি  সংসারের মায়াজালের যান্ত্রিক পুতুল হয়ে থাকতে । একবার তোমাকে পাওয়ার উন্মত্ত নেশায় আমি হতে চেয়েছিলাম রণধীর ,দিগ্বিজয়ী বীর, কিন্তু তাও পারিনি।
আমি শুধু পেরেছি স্বাস নিতে স্বাস ছাড়তে - চেষ্টা করেছিলাম কবিতা লিখতে কবিতাকে ভালোবেসে , তাও পেরেছি কিনা জানি না।
আজ সব যেন ইতিহাস - এন্টোনি এবং ক্লিওপেট্রার মতো কবিতার পাতায় আমাদের কেউ মনে রাখবে না - রাখবে না মনে নস্টালজিকতায় ,
হয়তো বা আমাদের প্রেমের ইতিহাস বন্দি হয়ে থাকবে ধূলিমাখা কোনো জঙ্গলের স্তুপে বা কোনো ফেরিয়ালার মুড়ির ঠোঙায় , হাত মোছা হয়ে হারিয়ে যাবে অনন্ত মহাকাশের নিরুদ্দেশে।
আজ তোমার সাথে আবার দেখা সেই চেনা পথের বাঁকে যে পথে তোমার যৌবনের উন্মত্ততা পাল তুলে হারিয়ে যেত কোনো নিরুদেশে  - আজ কিছুটা হলেও ক্ষয়িষ্ণু ও ক্লান্তি তোমাকে ছেয়ে গেছে,  তোমার  চুলেও  কিছুটা পাঁক ধরেছে। চোখের কোণে কিছুটা হলেও কালো আবছা আস্তরণ -দেখে কিছুটা  আন্দাজ করতে পারি -তোমার সঙ্গম হয়েছে অপরিতৃপ্ত , এখনো তুমি তৃষ্ণাত , তুমি যদি চাও আমি এখনো রাজি আমার পৌরুষের পরীক্ষা দিতে , যদি চাও এখনো সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে তুলে আনতে পারি নীল পদ্ম ।  
এখনো অনেক নারী, বক্ষের বিভাজিকায় আমাকে আমন্ত্রণ করে বটে , কিন্তু সেই আকর্ষণে  আছে যৌবনের উন্মত্ত পাশবিক খেলা ,লালসার তৃপ্তি , কিন্তু আন্তরিকতা নেই , নেই ভালোবাসা, নেই পূর্ণিমার জোৎসনার শান্ত স্নিগ্ধ পালকের আলতো ছোয়া - যে ছোয়ার স্পর্শে শিহরিত হয় শরীর -ভালোবাসায়, প্রেমে , নিবিড় নিস্তব্ধ আলিঙ্গনে ও অভিসারে।  
আজ ও আমি ভালোবাসি তোমায় - এখনো অপেক্ষায় কোনো এক বসন্তের গোধূলিতে যদি তোমার ডাক আসে , না হয় থেকে যাবো তোমার অন্তিম ভালোবাসার বন্ধুত্বের প্রদীপ হয়ে।
ভালো থেকো শ্রী ! ভালো থেকো!!
-