কবি পরিচয়, > সুলতান আহমেদ, তিনি একাধারে সমাজ সেবায় রত ও কবি । জন্ম স্থান সিলেট ,নিবাস ঢাকা-বাংলাদেশ । পেশা চাকরি , শিক্ষা -ডিপ্লোমা ইন ম্যাকানিক । দু’মাস হল আসরে এসেছেন , ৮৮ টি কবিতা প্রকাশ করেছেন  ।  তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য হল জীবনের অনুভূতিমূলক ,জন জাগরণ, বিদ্রোহী ভাব, প্রতিবাদী চিন্তা .কবিতার মাধ্যমে সমাজ জাগরণে --মনোবাসনা রাখেন ।
তাঁর কাব্য “জাত” সে কবিতা নিয়ে আমার কিছু কথা---আলোচনা ।
গোটা বিশ্ব বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের লোকে পরিপূর্ণ । সব জনগণের নিজস্ব বংশ পরিচয় আছে , দেশ - সমাজ -বংশ -স্থান-কাল ভেদে এ পরিচয়ের বিকাশ । তার মধ্যে গোত্র-কুল -ধর্ম-সম্প্রদায় নিয়েও ভিন্নতা দেখা যায় । সব মিলিয়ে জাতি-জাতি , এ প্রথা ও বিভেদ নিয়ে এক মানুষ অপর মানুষের সাথে নিজ- উঁচ-নীচ বা বড়প্পন ভাবনায় কুণ্ঠিত বা গর্বিত । কবির দৃষ্টিতে এ এক সামজিক ব্যাধি মানবতার অবমূল্যায়ন , দূরীকরনের ইচ্ছা রাখেন, তাঁর কাব্য
“জাত”, লেখা । ছয়টি স্তবকে কাব্য প্রকাশ , ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হল ।
"জাতের মায়া জাতের ছল
মানুষ ভুলে ,ঘরে অনল ।"
অসীম আপনত্ব মায়া, আপন আপন জাতির পর । আসলে এই মায়ার পেছনে মিথ্যা ছলনা লুকিয়ে , সহজে আমরা বুঝি না !
কবির অহম প্রশ্ন , এই জাতি ভাবনা মনে পোষণ করে একে অপরের ঘরে সহজে আগুণ লাগায় সেই আগুনে যে নিজ ঘর পোড়ে, তা’ সে কল্পনা করতে পারে না ! কবির প্রশ্ন এই অনল কি নির্বাপিত করা যায় না ? মনুষ্য সমাজে কি এর প্রতিকারের উপায় নেই ?
"জাতের গর্বে , জাতের হান,
ভাঙছে হৃদয় , দিচ্ছে মান।"
জাতকে নিয়ে সকলে গর্ব করে কিন্তু এই গর্ব দ্বারা একে এপরে রেশারেশি দ্বন্দ্ব কেই মান পায় কেহ মুর্ঝায় ।
কবি বলছেন ,"ধর্মের নামে কেবল ফাঁকি" ধর্ম মেনেও তার মধ্যে সততার অভাব , অন্যায় আচরণ , তার জীবনে দূর-দূর খুঁজে ও মানবতার সন্ধান মেলে না ।
“শান্তির খোঁজে, মিথ্যে দ্বন্দ্ব ,
বিপথগামী এই নরকন্দ ।“
মানুষের আসল মুক্তি সে কিসে হতে পারে , তার পথ কি কারো জানা ? হঠযোগেও সে রাস্তা মিলছে না, সত্য সেখাও কি পথ হারা ? কবির মনে এমনি সব প্রশ্ন ভরা । শান্তি জীবনে সবার একান্ত কামনা, তাই চারিদিকে নিজ বিচারে জাতি জাতিতে নিজ নিজ আচারে শান্তি খুঁজে বেয়ায় ।
এই জাত্যাভিমান নিয়ে কি না সবার মধ্যে গর্ব ,এ কি শান্তির পথ ? না শুধু আপসে দ্বন্দ্ব ভাবনা বৃদ্ধি ! সাথে হৃদয় জ্বালা -অনুতাপে দহন-কষ্ট বাড়ে । কাজে এটা একটা মিথ্যে ভাবনা আপসে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি ।
"সৃষ্টি বলে, শোনো সবে ,
মানুষ হও, থাকো ভবে।"
সৃষ্টিকর্তার উপর কবির অগাধ বিশ্বাস । কবি বলেন ,একবার তাঁর কথা -উপদেশমত চলো , প্রতিটি মানবের একমাত্র লক্ষ্য-ধেয় হওয়া উচিত কি কি সব কর্ম ও আচরণ গুণে সেবা ভাবনায় মানুষ হওয়া যায় সেই পথ ধর । এমনি জাগতিক সদগুণের পথ ধর । যে জন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী সে জন জাতের বাইরে হয়েও আদর্শ মানুষ ,অনুকরণ কর তাকে ।
"আসো তবে মিলাও হাতে ,
জাতের বন্ধন ছিঁড়ি সাথে ।"
অধুনা জগতে জাতি যে এক প্রগতির বড় বাধক ,তাই কবি সকলকে আহবান করে বলতে চান- এখন সময় এসেছে এ বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন । কালের প্রয়োজনে সবে মিলে এ বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে ফেলি । চন্দ্র সূর্য তারা এক হয়ে তার পবিত্র আলো অকাতরে সংসারে দান করে , সে মত আদর্শে জাতি জাতি এক হয়ে আমরাও আজ ভাল থাকি ।
"তোমার পথ ,আমার পথ
একই স্রোত ,চলুক রথ ।"
শেষে কবি বলেল , এখন শান্তির পথ জানা হল ,বাকি কাজ সকলে একই সহমর্মিতায় পথ ধরে সাথে হাত মিলেয়ে চলার সময় , একই পথ জাতি বিহীন- ধারায় উন্নতির রথগতিতে যেন আমরা ঐক্য ধারায় চলি ।
একমাত্র এই উপায়ে জাতির কঠোর দেয়াল ভেঙ্গে পডবে । এ ভাবে আগামী কালে আমরা প্রকৃত মানব রূপে গড়ে উঠব এবং পরিচয় দিতে পারব ।
পরিশিষ্টতে আমার বলা, বিজ্ঞকবি খুবই সামাজিক অনুভূবি ব্যক্তি । তিনি এই জাতিকে নিয়ে মানবকুলের অকারণ দোষ-দুর্গতি-দ্বন্দ্ব দেখে মর্মাহত । সমাজের এই এককেন্ত্রিক মনোভাব জাতিগত প্রথা কবিকে অশেষ পীড়া দান করে , হৃদয়ে কবি অনুভব করেছেন এই হীনমন্যতা জাতি বিচার না থাকলে মানুষ আরো কত উন্নত সভ্য এবং শান্তিতে থাকতে পারত, তারই গভীর ভাবনা নিয়ে সমাজের উপর জাতি প্রথার তীব্র বিরোধ করে যুক্তি-তর্কে বুঝাতে চান এ প্রথা ভাঙতে আজ সকলে এগিয়ে আসুক । অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জ্ঞানে ভরা ছন্দ কাব্য । ভাল শিক্ষামূলক ,খুব ভাল লেগেছে । আগে আরো কাব্য আশা করি । শুভেচ্ছা কবিকে ।