ভূমিকা---- বিদ্বান কবি দীর্ঘদিন আসরে আছেন ,তাঁর কবিতা পড়ি, আজ পর্যন্ত সমালোচনা করার সুযোগ হয় নাই । তিনি যে প্রকাণ্ড জ্ঞানী সন্দেহ নাই, তাঁর অন্যের মন্তব্যে- ব্যবহারে মানুষ্যত্ব মূল্যের প্রগাঢ় পরিচয় পাওয়া যায় ।
জীবনে তিনি অনেক অনেক অনুভূতি ভরা জ্ঞান রাখেন , যোগ্যতা হিসাবে উপযুক্ত পদে (মানব সম্পদ ,প্রশাসন) বিভাগে উঁচুপদে কার্যরত আছেন ।
তাঁর জ্ঞানবান কব্যটির জন্য আলোচনা না করে লোভ সামলাতে পারলাম না ।
জগতের সেরা জ্ঞান তাঁর কাব্যে পেলাম--- মানবকুলকে নিয়ে ।
১৬-টি স্তবকে কবি এক দীর্ঘ কাব্য লিখেছেন, যতোটা পারি সংক্ষেপে তার ভাবার্থ নীচে দিলাম ।
“দুনিয়া গোলাকার এই কথাটি সত্য” প্রথমেই কবি এক উদাহরণের উপর কাব্য শুরু করেছেন , আমরা যা জানি তা’ কতটা সত্য তার উপর ভিত্তি করে কাব্যের বিষয় , মাঝে মাঝে কিছু সামাজিক ব্যবহারিক জীবন বোধের কথা সুন্দর উদাহরণ যোগে লিখেছেন , যেমন -----
১ম স্তবকে শিশুর ধর্ম নিয়ে বলা –
শিশুও শিক্ষার দ্বারা এক দিন অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে আদর্শ বয়স্ক মানুষ হয় এবং আগে সেই পিতা হয় ।
২য় তে - পরিবর্তনের যুগধারা নিয়ম--------
গোটা জীবনে নানা পরিবর্তন আসে কত গল্প -শিক্ষার দ্বারা মেলে ,আসবাব পত্রেও পরিবর্তন ।
৩-য়তে উন্নততর সব ব্যবহার্য দ্রব্য----
বাড়ী ঘর প্রয়োজনীয় জিনিস , হাড়ি-পাতিল সব পালটায় । নাম- রূপও বদলায় তাদের ।
৪-চতুর্থ-তে-- “শুধু মোডিফাইড সভ্যতার বিকাশেরই” ।“
এবার কবি বলেছেন আগে বিজ্ঞানযুগ আসায় নানা মোড়িফাইড় সভ্যতা দেখা দেয়
একই জিনিস তার নানা রূপ পরিবর্তন ঘটে , শুধু চেনার অভাব ।
৫-পঞ্চমে , ক্রম বিকাশ বাড়ী-ঘর সব । আধুনিকতায় চাকচক্যের যেন সর্বস্থানে নবজোয়ার !
৬-ষ্ঠতে ---“জীবন চাওয়া পাওয়া অযোগ্যতা দিক” ..... এখানে কবি বলেন -চাহিদার সাথে আসে আয়-রোজগার , মানুষ সাধারণ হয়ে যেন বাঁচতে চায় না ! আরো আরো সব চাই –বেশ-ভুষায় বেশ চাহিদা চটক বাড়ে ।
৭-মে-“প্রেম জাগে প্রেম খোঁজ দিশেহারা প্রাণ”-----
আগে চাহিদায় প্রেমও বাড়ে এখানে বুঝাতে চেয়েছেন , কালে মানবমূল্য হ্রাস হয়
প্রেমে বৈধ-অবৈধ দেখা নেই -আগে শুধু চাহিদা....... !!
৮-মে ,“মানুষ হতে প্রকৃত অর্থ জ্ঞান অর্জন লব্ধ”.........
এখানে অনেক অমূল্য কথা বলেছেন ,প্রকৃত জ্ঞান না থাকায় কোন উৎপত্তির মূলস্থান জানি না । কিসের খুশী যখন মূলাধাই জানা নেই, পৃথিবী সত্যি কি গোল ?
এ জন্য সঠিক জ্ঞান অর্জনই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত্ ।
৯-মে---“চোখ আছে তাই দেখা”-
চোখ আছে আমরা সব উপরে দেখি কিন্তু অন্তর চোখে ক’জনে দেখি , কবি বলেন সবে দ্যাখে--- সত্য খাঁটি কি উপরে দেখলে কি বোঝা যায় ?
১০-মে-“লোকমুখে শোনা শেখা বুলি তাই বলি”
এ কথা সত্য , ‘পৃথিবী গোল’ এটা শোনা কথা ! আমরা মানি জানি শিখি , এভাবে বিশ্বাসে মন ভরে যায় তার পর আর চিন্তা করি না ।
১১-রো-তে ....“মিথ্যার পিছনে ছুটতে শেখা শুরুতেই”
কবির কাছে মজাদার ভাবনা---মিথ্যার পিছনে ছোটা--- কত কত বিষয় আগের ধারণাকে মেনে চলন , সত্য না মিথ্যা দেখা না , পৃথিবী কি আদৌ গোল !!
১২- রো-তে----“জানার জন্য দরকার শিক্ষা অর্জনের”
কবি বলেছেন---- জ্ঞান অতি মূল্যবান বিষয় তাকে একাগ্রতায় রপ্ত করা উচিত । কোনটা জীবনে দরকার –তাই নেওয়া উচিত ।
সব ধর্মগ্রন্থে সুন্দর দেওয়া আছে , সঠিকতায় রপ্ত না করলে জীবন বৃথা ।
১৩—"কৌতুক করিয়াও মিথ্যাবলা ম’পাপ !
নিষেধ করেছে হাদিস শরীফ অর্থবহে”
জীবনবোধের মূল্যবাণ উক্তি , মিথ্যা বলা মহাপাপ !! ধর্মপ্রাণ কবি বলেন এ কথা হাদিস শরীফ-এ উল্লেখ আছে । তবু আমরা কেন সে জ্ঞান নেই না !!
১৪-তমতে-“ধর্ম কোথায় মানুষ মনুষ্যত্বতা বিকাশে”
শেষের তিন স্তবকে চরম সত্যের বুলি ----যা কিনা আমায় আকর্ষণ করে ব্যাপক ভাবে ....... -“ধর্ম কোথায় মানুষ মনুষ্যত্বতা বিকাশে” , এ নিয়ে বিশাল সমালোচনা করা যায় তবে কটু সত্য অনেকের সহ্য হবে না তাই না বলাই ভাল । উপরে উপরে বলব –কবির কথায় আজ যেন ধর্ম মেনেও কত অন্যায় করে মানুষ, যার ফলে “মনুষ্যত্বতা বিকাশে” মূলধারায় বাধা । এর জন্য স্বয়ং খোদাও খুশি নন ।
১৫-তে---- “ঐ ধর্মের কথা বলি মিথ্যাচার আত্মায়
পরধন লোভ অপকার সেরা সে মনটি” ----এখানে বিস্তারে বলেছন –
মানুষ সে অমানুষ ভুল পথে চলে , সেবায় নেতা তিনিও লোভী কি লাভ সেবা করায় ! আত্মা যদি শুদ্ধ না হয় ধর্ম কর্ম সব বিফল ।
১৬-“কি ভাল হয় মানুষ রূপ পশু বসবাসে?
সঠিকটি শিখি সত্যটটা জানি বলি সত্য।“
শেষে এক প্রকার চিরসত্য কথাটি সমাপ্তিতে বলেন --- ধর্ম-কর্ম করে কি লাভ যদি মন যদি অপবিত্র থাকে । পথহারা দিশাহারা , পরঅনিষ্টে ভরা মন, পশুত্ব জীবন ।
এর জন্য মানুষকে আগে সুশিক্ষায় জ্ঞানী হতে হবে সব জেনে তবে সত্য বলা যাবে পৃথিবী গোল ।
কবিতা, জ্ঞানের সারকথায় পরিপূর্ণ , এখানে জীবন আদর্শ ও অন্ধবিশ্বাসের উপর সুন্দর দৃষ্টি আকর্ষণীয় কাব্য ,শিক্ষণীয়ও বটে । অনেক সৎসাহসের পরিচায়ক ধর্ম নিয়ে বলা । কবির অনেক কাব্য এমত মতাদর্শ কথা পাই , আমার ভাল লাগল ।
কাব্য কিছুটা বড়ো যার জন্য পাঠক কম আসবে । এই কথা , চেষ্টা করলে সংক্ষেপে করা যেত । কাব্য নিয়মে বা সুরুচির পাঠ্যে (বড়ো বলে) বা শ্রুতি মধুরতায় কমি আছে । জ্ঞানের দিকে জবাব নাই , মুগ্ধ ।
সম্মানীয়, বিদ্বান প্রিয়কবিকে সালাম , শুভরাত্রি ।