বাবু,
কাল সকালেই তুই আসবি জানি
আমার আর অপেক্ষা করা হোল না ৷
শেষবার যখন বাড়ি এসেছিলি, তখন তোর চোখে প্রশ্ন ছিল
'বাবা, শিক্ষকরা কেন এত একা?'
আমি কিছু বলতে পারিনি।

আজ উত্তর লিখছি।
শিক্ষকরা একা থাকে, কারণ ওরা বোঝে—
শুধু পাঠ্যবই দিয়ে ক্ষুধা মেটে না।
এইতো সেদিন সজলের মা এসেছিলো
বলেছিলো, ‘স্যার, আমার ছেলে তো ভালো পড়ত,
এখন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হয়েছে।’
এরকম আরো কত এসেছে
আমি কোনদিন কিছুই বলতে পারিনি।

আজ অবসর নিলাম,সত্যিই আমি ক্লান্ত,
ছলছল চোখে ওরা দাঁড়িয়ে ছিল
অবাক বিস্ময়ে,পাথরের মূর্তির মত,
শুধু বলেছিলাম সন্ধ্যায় একবার আসিস ৷

বিকেলে প্রধান শিক্ষক এলেন,
বললেন, ‘স্যার, এটা আপনার শেষ সম্মানী।’
একটা খাম বাড়িয়ে দিলেন হাতে ৷
খামের ভার অনুভব করলাম শেষ বারের মত।
সন্ধ্যায় ওরা এল,আমি
দোকানে গিয়ে এক হাড়ি পোলাও কিনলাম,
বিছানা থেকে চাদর তুলে বিছিয়ে দিলাম
ঘরের মেঝেতে,আজ এটাই আমার শ্রেনীকক্ষ,
বাচ্চাগুলো খেতে বসে গেল,
আমার চোখে তখনও জ্বলজ্বল করছিল
তোর ছেলেবেলার স্কুলড্রেসটা।

বাবু,
জানিস আমি কোনোদিন ধনী হইনি,
কিন্তু আজ অনুভব করলাম,
আমার মনের ভাঁড়ারে এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে।

তোকে ছেড়ে তোর মা ভালো নেই,
মাঝে মাঝে খোঁজ নিস।

ইতি— বাবা।

সকালের প্রথম আলো এসে পড়েছে খাতার পৃষ্ঠায়,
শেষ বৃত্তটা এখনো অসম্পূর্ণ,
আর দরজার কোনে —
একজোড়া জুতো, ধুলোয় ঢাকা,
পড়ে আছে  একটানা পথ চলার ক্লান্তিতে ৷