একটা নদী ছিল, খুব একা,
সে পাহাড়ের কোল ছুঁয়ে বয়ে যেত,
নদীর কপালে আঁকা বিজয় তিলক
কেউ বুঝতো না তার দেহের ভাষা ৷
নদী বলত,"আমি বয়ে চলি,
বয়ে যেতে হয়
এটাই পৃথিবীর পুরোনো অভ্যাস।"
মানুষ শুনত না,
তারা নদীর জলে নৌকা ভাসাতো,
জাল ফেলে ধরত মাছ ,
আর নদী ভাবত—
এটাই তার ভবিতব্য।
একটা পাখি ছিল, খুব রাগী,
তার গলায় জড়ানো ছিল আগুনের মালা,
সে আকাশে উড়তে উড়তে চিৎকার করত,
"মুক্তি চাই, মুক্তি চাই !"
কিন্তু লোকেরা বলত,
"ওটা তো পাখির গান!"
একটা গাছ ছিল, তার শেকড় পাথরের ভেতর,
গাছ একদিন বলে উঠল,
"আমি তো শুধু ছায়া দিতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু আমার ছায়ায় ষড়যন্ত্র রচিত হয়।"
তখন কাঠুরিয়া এসে বলেছিলো
"এসো তোমাকে কেটে ফেলি,
নচেৎ তোমার ছায়াতেই হবে বিপ্লবের জন্ম "
একটা শহর ছিল,
তার সাদা দেয়ালের গায়ে রক্তের ছোপ,
সে রাতে নিঃশব্দে কাঁদত,
কিন্তু সকালে মানুষ বলত,
"এটাই বেঁচে থাকার প্রকৃত ইতিহাস ৷ "
একদিন নদী থেমে গেল,
পাখি পুড়ে ছাই হল,
গাছের গুঁড়ি পড়ে রইলো পাথরের মতো ,
শহরটা খালি হয়ে গেল।
শুধু পৃথিবী জানতো
সবাই ক্লান্ত, ঘুমিয়ে আছে,
অপেক্ষা করছে নতুন জলের,
নতুন রোদের, নতুন বিদ্রোহের।
একদিন বাতাস বয়ে যাবে,
নদী আবার গাইবে তার পুরোনো সুর,
পাখির ছাই থেকে জন্ম নেবে অগ্নিপাখি,
গাছের ছায়ায় জমবে নত মুখের শপথ,
আর শহরের দেয়াল ভেদ করে
আসবে ভোরের আলো, প্রতিশোধের নয়—
ভালোবাসার সোনালী রোদ হয়ে।