সেদিন কেউ জানতো কি তুমি একদিন
এতো বড়ো হবে,মানুষের মতন মানুষ একজন
সেদিন কেউ কি জানতো এই সবুজ ত্রিশালে
তুমি যে পদচিহ্ন রেখে যাবে সময়ে তা হবে  
একদিনকার কালান্তরের ইতিহাস
তা ঘেঁটে ঘেঁটে অস্থির হয়ে যাবে শব্দভূক
যতো প্রাবন্ধিক-গভেষকবৃন্দ কিংবা কবি।

সে ডাগর চোখ ঝাঁকড়া বাবরি দোলানো চুল
অমরত্বের সন্ধিক্ষণের বিকশিত সত্ত্বায় খুলে
যে সুর-স্বপ্নের দ্বার-সুতিয়ার ঝিরিঝিরি বাতাসে
তার গন্ধ ভেসে আসে ক্ষণে ক্ষণে বারেবার।
ভুলো বে-ভুলো মন উচাটন দ্বিগ্বিদিকে ছুটে
ক্ষণে কাজির শিমলা-বীররামপুরে ক্যানভাসে আঁকে  
অগ্নিগিরির স্বপন;আবার ফিরে যাওয়া নামা ত্রিশাল
দূপুর রোদে শুকনীবিলে চিলডাকা,শালিক ডাকা বটবৃক্ষের  
মোলায়েম পাতার আড়ালে কূহক হয়ে বাজানো
বাঁশের বাঁশরী-সেই তোমার রাখালী বাঁশী শেখা
তারপর একহাতে নিয়ে বাঁকা বাঁশী অন্য হাতে তূর্য্য  
সময়ের সাথে দূরন্ত লড়াই-সব এই ত্রিশাল থেকে।

এইখানে রফিজউদ্দিনের বুকভরা স্নেহ ঘুরিয়ে
দিয়েছিল তোমার জীবনের নান্দীপাঠ –তুমি রুটির
দোকান থেকে হলে কবি-তোমার বুক ফুলিয়ে বলার
সাহস হলো-
              “ আমি একপাঁড়াগায়ে স্কুল পালানো ছেলে
                 তার উপর পেটে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও
                 ক” অক্ষর খুঁজে পাওয়া যাবে না’’।

কিন্তু কি তাই হয়েছিল?
তোমার আপন ধারনাই আমূল পালটে দিয়েছিলো
এই ত্রিশালের মাটি ,বাতাস,প্রেম ,ভালোবাসা আর স্নেহ।
তোমার সুভাষ ছড়িয়ে গেলো-ভাষাহীন দূরত্বের পথে
যেখানে আমি কবির ঠাঁই হবে না কষ্মিনকালে।

এইখানে পাখি ডাকা আলো হাওয়ার নিবিড়মায়া
তোমার বুকে বপন করেছিলো যে আনন্দের বীজ
আজ তা মহীরুহ-আমরা পরমানন্দে নেচে যাই তার
শাখায়-শাখায়,পাতায়-পাতায়,ছায়ায়-ছায়ায় প্রতিক্ষণ।

হয়তোবা সেদিন কারোও জানা ছিলো না
সেই দূরন্ত নজরুল-তুমি একদিন বিদ্রোহী হবে
মণনের আড়মোড়া ভেঙ্গে  স্বত্ত্বায় জাগিয়ে দেবে ফাগুন।
প্রতিপক্ষের গ্রানাইড দেয়াল ভেদ করে বেরিয়ে যাবে
বিক্ষত হবার শব্দ মালা-বাজিয়ে দেবে সাইরেন
আর সময় নেই-যে যেখানেই আছো ফিরে যেতে হবেই।

কেউ কি জানতো কারাগারের লৌহ কপাট ভেঙ্গে দেবে
করে যাবে আমৃত্য অনশনের সুত্রপাত-এই ভারতবর্ষে,
যা একদিন হবে মননশীল সুস্থ্য মানুষের প্রতিবাদের ভাষা।

আমরা জানি না-তুমি নিজেও জানতে না হয়তো তা,
জানতে না হয়তো এই ত্রিশালের আবহাওয়ার অলিন্দে
আছে যে স্ফুটনের গান-তা ভেঙ্গে লোপাট করে দিতে পারে
অত্যাচারির শিকলপূজার জমাট ঘৃণিত দূর্ভেদ্য কালোহাত।
যুগে যুগে কালে কালে শোষিতের পথের দিশারী হয়ে
আসে-ঠেলে দ্যায় ল্যাম্পোস্টের সোডিয়াম আলোয় অন্ধকার।

আর আমি অন্ধকারের গান গাই বলে বুকের ফেণিল রুধিরে
ধূয়ে এনকাউন্টার করে দিতে সব জঞ্জাল-ধূলোবালি-সমাচার,
তোমার প্রদীপের নীচে এসে স্থির হই বিম্বিষার জগত ছেড়ে
শপথের মুঠো তুলে বলি-আমিও আছি জেগে রাতজাগাপাখি।

তুমি তো আমাদেরই আছো-এই বুকে-বুকে,চোখের তারায়,
কখনো তোমার ফিরে যাওয়া হবে না এই শিকড় ছেড়ে।  

আমাদের যাবতীয় শ্লোগান তোমার রথযাত্রার সত্যসাথী
অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যেন তুমি এই ত্রিশালের দেহের কনায়।
আমাদের ভাববার কিছু নেই-যেখানে আত্মা মিশে আছে
তোমার আত্মার গহীনে একাকার হয়ে চিরন্তন চিরদিন ।  
রচনাকালঃ০১/০১/২০১৫