চাঁদের কলঙ্ক থাকুক বা না পৃথিবী নিখুঁত - আমরাই হারাই প্রিয়জনকে
সুন্দর পৃথিবী এতই মনোরম মুহূর্তেই পারে যে কারো মন কেড়ে নিতে। বাড়তি সময়ের প্রোয়জন হয়না। নিমিষেই বাঁধতে পারে বিনি সুতার বাঁধনে। তাই বুঝি এই অপূর্ব ধরাপৃষ্টে যে কেহই হোন, হোন যতই যত্নশীল জীবনমুখী, তাঁকে বেশিক্ষন থাকতে হয়না। থাকা যায়না।
কারো প্রয়োজন স্থীতিশীল হয়না। সবাইকে চলে যেত হয়। বলতে গেলো অনেকটা গুছিয়ে নেবার আগেই। যেতে হয় বড় দ্রুত।
কই, এতো সাজানো গুছানো পৃথিবী মালঞ্চে এমন হরদম অবাঞ্চিত বিদায় কি কোনও বাসন্তী, কোনো ফাল্গুনী পুষ্পচিত্তে একটু ও দাগ কাটেনা? কখোনো না। আমরা জানি এটা কখনো হয়না।
চাঁদের কলঙ্ক থাকুক বা না। পৃথিবী নিখুঁত। অবিচল। সময়-অসময়ে এই সুন্দর পৃথিবীতে আমরাই হারাই প্রিয়জনকে।
অবশেষে যেতে হবে নীজেকেও। তখনও থাকবে ধরাপৃষ্ট। হাজারো প্রিয়জনের পদভারে প্রিয়াঙ্গন।
এই কথাগুলো আবেগময়। বলা যায় একটি সৃজনশীল অভিব্যাক্তি। আসলেই কি তাই? এর ব্যাপ্তি কি এখানেই শেষ, এর সাথে কি বাস্তবতার কোনো মিল নেই?
এর উত্তর রয়েছে আমাদের অনেকের কাছেই। আমরা যারা প্রিয়জনকে হারিয়েছি। হাড়ে, হাড়ে অনুভব করেছি পিতা-মাতা হারানো ব্যথা। আমাদের কে কারো কাছে জিজ্ঞাসা করতে হবেনা। এর সত্যতা প্রমানের কোন দলিল খোঁজতে হবেনা।
জীবন্ত বিশ্বে প্রিয়জনের মৃতদৃশ্য কত যে হৃদয় বিদারক তা আমাদের জানা হয়ে যায়। আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
আমার শ্বশুরালয়ে সকলের এমনি একজন প্রিয়মুখ, সিলেট রায়নগর নিবাসী, অধ্যক্ষ জনাব মুহিবুর রহমান মুহাম্মদ, শেষ নিঃস্বাশ ত্যাগ করলেন। আজ ১৭ ডিসেম্বর, সুবহে সাদেক সংলগ্ন ভারী পুণ্যময় সময়ে।
তিনিঁ ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভাদর শিক্ষাবিদ ও সফল অধ্যাপক। জীবনের বড় একটি সময় কাটিয়েছেন মৌলিভীবাজার কলেজের অধ্যক্ষ রূপে। ছিলেন বিয়ানীবাজার ও শ্রীমঙ্গল কলেজের স্বনাম ধন্য অধ্যক্ষ। অর্জন করেছেন প্রচুর খ্যাতি আর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীদের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সিলেট বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার তিনি ছিলেন এক সুপটিত তেজস্বী কবি।
যেখানে বসতেন সেখানে সাথীজনকে বুঝার তীক্ন বুদ্ধি আর শৈল্পিক কথনে মেতে তুলতেন চারিপার্শ।
আয়েশা আহমেদের বড় চাচা, সম্পর্কে আমার চাচা শ্বশুর। তবে আমরা উভয়েই সাহিত্য ঘরোনার লোক তাই গড়ে উঠে এক অনন্য সম্পর্ক। আমাদের এখানে হলেই হলো। বসতো আসর, ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ইর্যান্বিত হতেন অনেকেই। কিন্তু তিনি পারতেন, সবাইকে মন খোলে হাসাতে। অবশেষে নীজে হাসলেন অন্তিম হাসি।
এ হাসির যেন অন্ত না হয়। থাকুক লেগে তাঁর চুখে-মুখে ওই না জানা ওপারেও। আমাদের সবাইকে একদিন যেখানে পাড়ি দিতেই হবে। জানতে হবে। চিনতে হবে। কোনো ছাড় নেই।