ভাটির দেশে চলরে মাঝি ভাটির দেশে চল ,
ভাটির গাঙে স্নান করিবো ঘুরবো কতই বল !
মেঘলা আকাশ হাতছানি দেয় করছে কতই ছল ,
ভাটির দেশে চলরে মাঝি ভাটির দেশে চল ।
হাওর বাওর বাংলা আমার দেখতে যদি চাও ,
ভাটির দেশে যাও গো তুমি ভাটির দেশে যাও ।
সেই দিগন্ত বিস্তৃত সুবিশাল হাওরের বুকে, আমি নৌকা বিলাসে গিয়েছিলুম, কেবল দুটি নতুন শব্দ পাবার আশায় ,
যদি অকষ্মাৎ আমি পেয়ে যেতুম, এই উত্তাল জলরাশির অপ্রকাশিত কোন সৌন্দর্যের খোঁজ !
যেন তার অধরা মুগ্ধতায় আমি বিস্মিত হয়ে থমকে যেতে পারি, তাদের স্বচ্ছ রূপের মায়ায় ,
তাই বুঝি সেদিন কবির আগমনী সম্ভ্রমে, হাওর কন্যা সাজুগুজু করেছিল নববধূর মতন !
তাই বুঝি আমি সেদিন হাওরের শীতল জলে, এত স্নিগ্ধ আদর পেয়েছিলুম !
তাই বুঝি মম অস্তিত্বে ছাতির চরের সেই আধ-ডোবা হিজল মলয়, তাদের অপূর্ব সবুজ আঁচল তলে আমায় বরণ করে নিয়েছিল ।
হয়তো সেদিন তাই হিজল পাতার সুবাসে আমায়, এতো যত্ন-ভরা হাওর সলিলে বর-বেশী স্নান করিয়ে ছিল ,
হয়তো তাই আমায় অভিবাদন জানাতে, সহসা আধ-পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল কতক দলছুট বৃক্ষ সারি !
হয়তো আমারই আতিথিয়তায় বিচ্ছিন্ন কচুরিপানার দল, ভাটির গাঙের জল স্রোতে দক্ষিণা হাওয়ায় ভেসে এসেছিল ।
সেদিনি প্রথম আমি উপলব্ধি করেছিলাম, আকাশ আর নদীর মাঝের অদৃশ্য সেই অদ্ভুত মিত্রতা ,
তাই তো অকারণেই আকাশের ধবল মেঘগুলো, বারংবার চক্রবালে উন্মুক্ত জলরাশির সাথে হারিয়ে যেতে চায় ,
যেথায় দুচোখ মেলে কেবল উত্তাল ঢেউ তোলা অম্বুর ধারার আসুরিক সৌন্দর্য তোমায় বিমোহিত করতে চায় ,
যেথায় নৌকোর পাটে দুহাত মেলে দাঁড়িয়ে তুমি, দুরন্ত গাংচিল গুলোর খুনসুটি দেখতে পাবে ,
যেথায় দখিনা বাতাস তোমায় জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার গল্প শোনাবে, তোমার শ্রুতিতে শীতল চুমু দেবে !
সেথায় নৌকোর কিনারায় বসে ভাটির স্বচ্ছ জলে পা ভিজিয়ে ভিজিয়ে, চলে যেতে পারো স্বপ্নের সেই অপূর্ব মোহনায় ।
আর বেলা ফুরাবার কালে বন্ধুরা মিলে হাসি-আনন্দে গাইতে পারো, ঐতিহ্যময় সেই ভাটিয়ালি সুরের গান ,
আর উপভোগ করতে পারো হাওরের দিগন্তজোড়া গোধূলির সূর্যাস্তের সেই, নিরব অদ্ভুত সৌন্দর্যময় লগন
কিংবা প্রিয়ার কোলে মাথা রেখে হারিয়ে যেতে পারো, বিস্তৃর্ণ জলরাশির বুকে মায়া ভরা ভালোবাসায় ;
এই পড়ন্ত সন্ধ্যালোকে ।।