একটা ঘড়ির প্রয়োজনীয়তা বোদ করছি। যেন তেন ঘড়ি নয়, রক্ত মাংসের ঘড়ি। যে আমাকে ঠিক ঠিক সময় বলে দিবে। জানিয়ে দিবে আমায় দৈনিক পার্থিব রুটিন। সময়ে সময়ে যে আমাকে এলার্ম করে দিবে।
সে টিক টিক আওয়াজ করলে চলবে না। তার মিষ্টি একটি কণ্ঠ থাকবে, যে কণ্ঠ থেকে ভেসে আসবে মধুর সংলাপ। যে সংলাপে আন্দোলিত করবে আমার প্রতিটি মুহুর্ত্ব।
আমার প্রত্যাশিত ঘড়িতে তিনটি কাটার পরিবর্তে থাকবে মসৃণ কোমল দুটো হাত দুটো পা। তাতে থাকবে নাড়ীর স্পন্দন, থাকবে প্রাণের উষ্ণতা।
যখন আমি গভীর ঘুমে তখন সে ঘড়িটি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলবে "আর কত ঘুমাবে, এবার উঠো"। তাতেও যদি না ভাঙে আমার ঘুম তবে সে তার দুটো হাত দিয়ে আমার হাত ধরে টেনে তুলবে ঘুমের খাঁদ থেকে। অথবা শীতের সকালে আমার দুচোখে তার কোমল হাত দিয়ে ছোয়াবে বরফ শীতল জল।
ঘড়িটির অভ্যন্তরে পেন্সিল ব্যাটারির পরিবর্তে থাকবে অলিন্দ ও নিলয় সম্বলিত হৃদয়। যে হৃদয় বুঝবে হৃদয়ের টান। সে হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন থেকে আমি পেয়ে যাব সেকেন্ডের হিসাব।
ষাট সেকেন্ডে এক মিনিট, ষাট মিনিটে এক ঘণ্টা এ হিসাব আমাদের ডাটাবেজে চিরকালের জন্য রক্ষিত। এই ডাটাবেজে হৃদয়ের স্পন্দন সংযোজন করে বের করে নিব মিনিট ও ঘণ্টার আয়োজন।
আমার প্রত্যাশিত ঘড়িটি হাত ঘড়ির মতো সর্বক্ষণ আমার সাথে না থেকে যদি চায় দেয়াল ঘড়ির মতো ঘরের অভ্যন্তরে থেকে সে আমার গৃহের শোভা বৃদ্ধি করুক তাতেও আমার আপত্তি নেই। এমন ঘড়ি গৃহেই বেশী মানায়।
ঘড়িটি জানবে আমার সকল কর্মযজ্ঞ। আমার ঘুম থেকে উঠার সময়, আমার নাস্তার করার সময়, আমার গোসলের সময়, আমার অফিসে যাবার সময়, আমার বাড়ি ফেরার সময়, আমার ফেসবুকে বসার সময়, আমার লেখালেখির সময়, আমার ঘুমুতে যাবার সময়গুলো তার কাছে থাকবে পরিধেয় শাড়ির মতোই চেনা।
এই সময়ের কোন হেরফের হলেই যে আমাকে শাসিয়ে দেবে, মৃদু আপত্তি জানিয়ে বলবে এখন-তো "এটা করার সময় এখন নয়"।
আমার ঘড়িটি আমার সাথে থাকবে আমার বয়সকাল পর্যন্ত। অন্যান্য ঘড়ির মতো আমার ঘড়িটির ব্যাটারি পরিবর্তন করতে হবেনা। বরঞ্চ তার হৃদয়ে ভালবাসার নির্যাস ঠেলে দিলে সে ঠিকঠাক আগের মতোই চলবে।
রক্ত মাংসের একটা ঘড়ির খুব প্রয়োজন আজ সময়ের সাথে পাল্লা দিতে,
খুব প্রয়োজন একটা ঘড়ির অসময়ে রাখতে হাত সময়ের হাতে।
-২৬ ডিসেম্বর ১৩