যেদিন তোমার, ঘনশ্যামকেশ আড়াল হইবে ধূসরে,
ডাগর ডাগর দুচোখ তোমার মিশিবে অক্ষিকোটরে,
বয়সভারের শিথিলতাটুকু প্রকাশ পাইবে ত্বকে,
কত ক্লান্তির অবসাদটুকু আসিবে ম্লান মুখে।
জীবননদীর বাঁধভাঙা স্রোতে ক্ষয়ে যাবে তব কায়া,
ক্ষয়ে যাবে অই মেহেদী হাতের মৃন্ময়ীরূপ মায়া।
দর্পণমুখে চাহিয়া তুমি যে দেখিবেনা আপনারে,
ভুলিয়া যাইবে অগাধে লালিত বিলাস বাসনারে।
যার মনে তব মুখশ্রী চাহিয়া, বড় বেশি আবেদন,
অচিরেই সে যে ভুলিবে তোমায়, ভুলিতেই কতক্ষণ!
হয়তো ভীষণ, বুঝিবে তখন, উদাসীন আনমনায়,
শত শর্তের উর্ধ্বে তোমারে, বাসিয়াছে একজনায়।
হাজারের ভিড়ে মত্তের মত খুঁজিনি তোমার যৌবন,
বাসিয়াছি আমি চিত্ত তোমার, প্রাঞ্জল শিশুমন।
প্রসূনের পানে, যারই মননে, বাধহীন ব্যাকুলতা,
সে তো না বলেই ছেড়ে চলে যায় ছিঁড়িয়া পুষ্পলতা,
বিস্তৃত ডানা দেখিতে যে চোখে প্রবল কৌতূহল,
ডানাভাঙা পাখি সেই নয়নেতে নির্জীব নিশ্চল।
ফুলহীনলতা আগাছা ভাবিয়া আমি তো করিনি পর
ফিরাইতে পারি নি, সে বিহঙ্গের অতুল কাতর স্বর।
জাগতিক জঞ্জালাদি জীর্ণতা যে বড়ই অনাসক্তি,
তোমার উপস্থিত অস্তিত্বের ঘ্রাণ আমার অনুরক্তি।
যবে সকলেই ভ্রান্ত ছিলো, তব রূপমোহেরই বৃত্তে,
হৃদয় আমার ডুবিয়া ছিলো, তোমাতে নিহিত সত্যে।
তুমিময় যত অনুরাগ আমি রাখিব সঙ্গোপন,
বৃদ্ধ কি হবে আমার সহিত, এতটুকু নিবেদন।