যেন চৈতালী চালে, চিত্রা হরিণী চারণ করিছে পথ,
পিপীলিকারূপ শৃঙ্খল যেন তাঁহার প্রতিটি পদ।
জোছনা জ্যোতি, জোনাক জ্বালে, নিভৃত ভূলোকে
তন্দ্রার ঘোর, কেটে যায় মোর, তাঁহার ও দুই চোখে।
শত যামিনীর রজনীগন্ধা সুরভিত তাঁর গন্ধে,
পিঞ্জরে দোলে হৃদয় আমার দারুণ দিদার ছন্দে।
সন্ধ্যাতারার সন্ধ্যাপ্রদীপে সে যেন সন্ধ্যামালতি,
দাপিয়ে বেড়ায়, ফড়িংয়ের ন্যায়, ছড়িয়ে মুগ্ধ দ্যুতি।
বাবুইবাটীতে বসত তাহার, নির্জন নদীতীরে,
অনিমেষভরা নয়নেতে আমি আঁখিপাত করি তাঁরে,
সে যে কিচিরমিচির চড়ুইকন্ঠী, কোকিলের কুহুতান
সে যে বন্টিত করে স্নিগ্ধ সুবাস, শিউলি মাল্যদান।
সে অলির আদলে ভ্রমিয়া বেড়ায়, মধুমল্লিকা মঞ্চে,
যেমনি শৃঙ্গসমীপে পর্বতমালা মিশিয়াছে মেঘপুঞ্জে,
সে তো চিন্ময়ী চির চম্পা-চামেলী, নন্দিত পদচারী,
সে তো ব্যাথাতুর এক মিষ্ট বেদনা, সুচির শর্বরী।
অবনীর মাঝে অবারিত তাঁর প্রাঞ্জল স্মিত হাসি,
সে যে অববাহিকার অবাধ ধারার, ঊর্মিল উচ্ছ্বাসী।
দীঘিজলে ভাসা শাপলা-শালুক, চঞ্চল শ্বেত হংস,
সে যে কল্পতরুর পদ্যপ্রতীম বিস্তারী বৃত্যাংশ।
শারদের মেঘে, মন্থর বেগে, পালতোলা ছোটতরী,
সে যে তাথৈথৈ নুপুরের ধ্বনি, রঙিন কাচের চুড়ি।
সে যে বাদলা দিনের, গল্পমুখর মনোহর সাঁঝবেলা
তাঁর প্রত্যুষ কাটে নন্দনে, যেথা নতুন কুঁড়ির মেলা।
বড় মায়া তাঁর ফেরার চাহনী, নিশীথের আলোকে।
ভাবি বারেবারে জিজ্ঞাসি তাঁরে, কে তুমি, তুমি কে?